শ্রীমঙ্গলে ফলে ফুলে নাগলিঙ্গম

সৈয়দ সালাউদ্দিন, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২১, ১১:৩৮ এএম

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনিস্টিউটে ( বিটিআরআই) ফলে ফুলে ভরে উঠেছে নাগলিঙ্গম গাছ।
নাগলিঙ্গম এক প্রকার বিশাল বৃক্ষ, যার ফুলের নাম নাগলিঙ্গম ফুল। এর ইংরেজি নাম ‘ক্যানন বল’। ‘ল্যাসাইথিডেসিয়া’ পরিবারের নাগলিঙ্গমের বৈজ্ঞানিক নাম ‘করোপিতা গুইয়াসেসিস’। নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল।
এই গাছে ফুল ধরার পর বেলের মতো গোল গোল ফল ধরে। এগুলো দেখতে কামানের গোলার মতো। আবার এই ফলগুলো হাতির খুবই প্রিয় খাবার বলে এই অঞ্চলে এর অন্য নাম হাতির জোলাপগাছ।
নাগলিঙ্গম গাছ ৩৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুচ্ছ পাতাগুলো খুব লম্বা, সাধারণভাবে ৮ থেকে ৩১ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। বছরের প্রায় সব ঋতুতেই এই গাছের পাতা ঝরে এবং কয়েক দিনের মধ্যে আবার নতুন পাতা গজায়।
শোনা যায়, নাগলিঙ্গম গাছে যখন ফুল ফোটে তখন ফুল হতে অদ্ভুত মাদকতাময় গন্ধ বের হয়। সেই গন্ধে নাগিনীর গায়ের মতো কামগন্ধ খুঁজে পায় নাগ। কামের নেশায় মত্ত হয়ে তখন নাগ ফনা তোলা নাগিনীর মতো দেখতে ফুলের কাছে ছুটে যায়। সাপুড়েরা তাই এই গাছের নাম দিয়েছেন নাগলিঙ্গম। উপমহাদেশে কালক্রমে এই নামটিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছে। এটা কতটা সত্য তা সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
জানা যায়, প্রায় তিন হাজার বছর আগে থেকেই গাছটি ভারত উপমহাদেশে একটি পবিত্র উদ্ভিদ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শিব ও সর্প পূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করেন। ভারতে নাগলিঙ্গমকে ‘শিব কামান’ নামে ডাকা হয়।
বৌদ্ধদের মন্দিরেও এই ফুলের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এ কারণে থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমারের বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গণে নাগলিঙ্গম গাছ বেশি দেখা যায়।
ভেষজ গুণসম্পন্ন নাগলিঙ্গম গাছের ফুল,পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ হয়।
দ্রুত বর্ধনশীল নাগলিঙ্গমগাছে চারা রোপণের ১২-১৪ বছর পর গাছে ফুল ধরে। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে ফুল ফোটে। গাছের কাণ্ডভেদ করে বেরিয়ে আসে প্রায় ৭ ইঞ্চি দীর্ঘ অসংখ্য মঞ্জুরি। এক একটি মঞ্জুরিতে ১০-২০টি ফুল ক্রমান্বয়ে ফুটতে থাকে। মঞ্জুরির একদিকে নতুন ফুল ফোটে, অন্যদিকে পুরাতন ফুল ঝরে পড়ে।
ফুলের রঙ অনেকটা লালচে কমলা বা লালচে গোলাপি হয়ে থাকে। ফুলে ৬টি মাংসল পুরু পাপড়ি থাকে। ফুলের মাঝে থাকে নাগের ফনা আকৃতির পরাগচক্র। ধারণা করা হয়, এর কারণেই এই ফুলের নাম হয়েছে নাগলিঙ্গম।
ফলগুলো চকলেট রঙের। যার ব্যাস প্রায় ১৫ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ফল পরিপক্ব হতে প্রায় এক বছর সময় নেয়। পরিপক্ব ফল মাটিতে পড়লে ফেটে যায়। বাতাসে খানিকটা ঝাঁজালো গন্ধ সৃষ্টি হয়। ফল মূলত পশুপাখির খাবার। মানুষের জন্য এ ফল অখাদ্য। একটি ফলে ২০০ থেকে ৩০০ বীজ থাকে। ফ্রান্সের একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জেএফ আবলেট ১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ করেন।
বাংলাদেশে নাগলিঙ্গম খুব একটা দেখা যায় না। ঢাকা রমনা উদ্যানে ও মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে রয়েছে কয়েকটি গাছ।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ গৌরীপুর, মুক্তাগাছায়, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, কক্সবাজার, বান্দরবান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, নটর ডেম কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এবং চন্দ্রিমা উদ্যানে বিভিন্ন বয়সী কয়েকটি নাগলিঙ্গমগাছ রয়েছে বলে জানা যায়।
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পর্যটকরা চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গলে নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) ক্যাম্পাসে অবস্থিত এই নাগলিঙ্গমগাছ দেখে মুগ্ধ হয়ে যান।