Logo
Logo
×

সারাদেশ

দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ

Icon

রফিক মোল্লা চৌহালী (সিরাজগঞ্জ)

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২১, ০২:৫৩ পিএম

দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ

ছবি: যুগান্তর

দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী দ্বারা নির্মিত আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ। সিরাজগঞ্জ-এনায়েতপুর সড়কের বেলকুচি পৌরসদরে অবস্থিত। মসজিদ ভবনটি যে কেউ প্রথম দেখলেই মনের অনুভূতি হবে, এ যেন সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার এক অপূর্ব মেলবন্ধন।

আগামীকাল শুক্রবার দেশের অন্যতম সেরা এই সৌন্দর্যমণ্ডিত মসজিদটিতে জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হবে। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল মমিন মণ্ডলসহ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও দেশবরেণ্য আলেম-ওলামারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

প্রাপ্ততথ্যে জানা যায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুকুন্দগাতী গ্রামের শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী সরকার বেলকুচি পৌরভবনসংলগ্ন দক্ষিণে আড়াই বিঘা জমির ওপর তার ছেলে আল-আমান ও মা বাহেলা খাতুনের নামে ‘আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ’ কমপ্লেক্স নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

তিনি নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করে নয়নাভিরাম এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এটি নির্মাণে সময় লেগেছে চার বছর। শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫ শ্রমিক কাজ করেছেন।

রহমত গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার এ মসজিদ কমপ্লেক্সসহ বাহেলা খাতুন চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে বিনামূল্যে এলাকার অসহায় দুস্থ রোগীদের সেবা দিয়ে আসছেন।

তবে মানবিক এ শিল্পপতি গত বছরের আগস্ট মাসে ইন্তেকাল করেছেন। এর পর তার পরিবারের চেষ্টায় মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয়।

এ মসজিদের অন্যতম খাদেম আবদুল মান্নান ও মুসল্লি সুজন মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, এ মসজিদে ছাই রঙের বিশালাকৃতির মনোরম একটি গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়া মেঝেতে সাদা রঙের ঝকঝকে-তকতকে টাইলস এবং পিলারগুলো মার্বেল পাথর জড়ানো রয়েছে।

তৃতীয় তলায় গম্বুজের সঙ্গে লাগানো ছাড়াও অন্যান্য স্থানে চায়না থেকে আনা বেশ কয়েকটি আলো ঝলমল ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে। দুই পাশে নির্মাণাধীন ১১ তলা সমতুল্য (১১০ ফিট) উচ্চতার মিনার থেকে আজানের ধ্বনি জমিনে ছড়িয়ে পড়ছে।

তিনি আরও বলেন, বেশ দূর থেকেই মসজিদের গম্বুজ ও নির্মাণাধীন মিনার দুটি নজর কাড়ে। মসজিদের চারপাশে সাদা রঙের পিলার, সুউচ্চ জানালা, সাদাটে রঙের টাইলস। মসজিদচত্বরে পরিকল্পিতভাবে লাগানো সবুজ ঘাস। চার পাশে রঙবেরঙের লাইটিংয়ে রাতেরবেলা এক অন্যরকম আবহের সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে বেশ শান্ত পরিবেশ। এ কারণে সামনের সদা ব্যস্ত সড়কের কোলাহল যেন স্পর্শ করে না মসজিদটিকে।

এ বিষয়ে মসজিদ নির্মাণকালীন দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত (বাহেলা খাতুন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা) আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে জানান, এখানে ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের থাকার জন্য মসজিদের পাশে ১০ তলা ভবনে নিজস্ব কোয়ার্টার। পাঠাগার ও শৌচাগার রয়েছে। সেই সঙ্গে মসজিদের প্রবেশ পথের দুই সিঁড়ির পাশে কাচে ঘেরা অটো ফিল্টার করা পানি দিয়ে ওজুর ব্যবস্থা আছে।

এ ছাড়া ইতালি ও ইন্ডিয়া থেকে আনা উন্নতমানের মার্বেল পাথরসহ কাঠের
কারুকাজে মসজিদের বিভিন্ন স্থানকে আকর্ষণীয় করতে নান্দনিক নকশার কাজ করা হয়েছে। বিশেষ করে মসজিদের সম্মুখের উচ্চ দুটি সিঁড়ি এবং ব্যতিক্রমী প্রবেশ পথ ও প্রধান ফটক যে কারও দৃষ্টি কাড়ে।

এই মসজিদটি নির্মাণের পর এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিসহ সব ধর্মের মানুষ এখানে এসে তাদের দৃষ্টি জুড়িয়ে নেন।  এ ছাড়া এখানে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। শবেবরাতের রাতে জেলার বহু অঞ্চলের মানুষ এখানে নামাজ ও নফল ইবাদতসহ মসজিদটি পরিদর্শনে এসেছিলেন।

এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুল, ইউএনও আনিছুর রহমান ও পৌর মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা জানান, প্রথম দেখাতেই যে কারও দৃষ্টি কাড়ে এ মসজিদটি। এটা নিছক উপাসনালয় নয়। দেশি-বিদেশি পর্যটকের কাছে এই মসজিদের নির্মাণশৈলী বেশ আকর্ষণীয়। ব্যস্ত সড়কে যাতায়াতকারী যে কেউ প্রথম দেখাতেই থমকে দাঁড়ান। পৌর সদরে হওয়ায় ইতোমধ্যে মসজিদ কমপ্লেক্স ঘিরে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে।

এদিকে মসজিদ নির্মাণকারী প্রয়াত আলহাজ মোহাম্মদ আলী সরকারের পরিবারের কারও সঙ্গে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, আল্লাহর ঘর নির্মাণে আমরা কাজ করেছি। নিজেদের এখানে আমরা কোনো প্রচার চাই না।

মানুষ শান্তিতে নামাজ পড়বে তাতেই আমাদের শান্তি। তবে মসজিদ নির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা মোহাম্মদ আলী সরকার বেঁচে থাকলে এবং তিনি এখানে নামাজ পড়তে পারলে আরও বেশি ভালো লাগতে। এটিই আমাদের অপূর্ণতা রয়ে গেল। সবাই দেওয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম