
প্রিন্ট: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:২৩ এএম
ফুটবলের সোনালি যুগের মহানায়ক মোনেম মুন্নাকে ভুলে গেছি আমরা

রাজু আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৪১ পিএম

আরও পড়ুন
তাকে নিয়ে বাংলাদেশের সাবেক জার্মান কোচ অটো ফিস্টার মন্তব্য করেছিলেন- ‘He Was Mistakenly Born In Bangladesh’।বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি ইতিহাসের সেই মহানায়ক মোনেম মুন্নার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে একেবারেই অনাড়ম্বর পরিবেশে।
দেশের সর্বকালের কৃতী এই ফুটবলারের মৃত্যুবার্ষিকীতে জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পরিবারের লোকজন, বন্ধুমহল আর স্থানীয় ফুটবলারদের একটি অংশ ছাড়া দেখা মেলেনি বর্তমান বা অতীতের জাতীয় কোনো তারকা খেলোয়াড় এমনকি ফুটবল ফেডারেশনের কোনো কর্মকর্তাকে।
বন্দরে মুন্নার কবরস্থানে ফুল দেয়া আর পৈতৃক বাড়িতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এই ফুটবলারকে স্মরণ করা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যে আওয়ামী যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক পদে ছিলেন তিনি; সেই সংগঠনেরও কেউ আসেনি মোনেম মুন্নার মৃত্যু দিবসে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান কিংব্যাক খ্যাত এই তারকা। মোনেম মুন্না ১৯৯৯ সালের রমজানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। সেখানেই তার কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়ে। পরের বছর মার্চে বেঙ্গালুরুতে বোন শামসুন নাহার আইভীর কিডনি তার দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। ২০০৫ সালের ২৬ জানুয়ারি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে আর বাড়ি ফেরা হয়নি এই কিংবদন্তির।
প্রসঙ্গত, ১৯৮১ সালে পাইওনিয়ার লিগ দিয়ে ফুটবলে অভিষেক হয় মোনেম মুন্নার। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে পেশাদার ফুটবলে উত্থান। প্রথম দুই মৌসুম মুক্তিযোদ্ধায়, এরপর এক মৌসুম ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলেন। ১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়ান গেমসে প্রথমবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন। এরপর দু-একটি ম্যাচ বাদ দিলে টানা ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছেন এই ডিফেন্ডার।
১৯৯১ সালে দলবদলে মুন্না আবাহনীর হয়ে রেকর্ড পরিমাণ পারিশ্রমিক পান, যা ছিল ওই সময়ে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এক অনন্য রেকর্ড। আবাহনীর হয়ে তার ফুটবল ক্যারিয়ারে দলকে পাঁচবার ঢাকা লিগ এবং তিনবার ফেডারেশন কাপের শিরোপা জেতাতে সক্ষম হন।
১৯৮৭ সালে তিনি যোগ দেন ঢাকা আবাহনীতে। সেখানেই গড়ে তোলেন নিজের ফুটবল ক্যারিয়ার। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আবাহনীর সঙ্গেই জড়িয়ে ছিলেন। ১৯৯১ মৌসুমের দলবদলে মুন্না আবাহনীতে খেলেছিলেন সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পারিশ্রমিকে। ওই সময় প্রভাবশালী ম্যাগাজিন বিচিত্রার কাভারও হয়েছিলেন এই তারকা।
১৯৯০ সালে বেইজিং এশিয়ান গেমসে মুন্না প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান। তার নেতৃত্বেই ১৯৯৫ সালে মিয়ানমার থেকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতে ঘরে ফেরে লাল-সবুজরা। বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে যা প্রথম সাফল্য।
মোনেম মুন্নার ছোটভাই সাবেক ফুটবলার মকবুল হোসেন রতন জানান, মুন্নার জন্য আমাদের দেশে দৃশ্যমান তেমন কিছুই করা হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের তথা ওপার বাংলাসহ দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল অঙ্গনে মুন্নার অবদান ভোলার মতো নয়। আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে মুন্নার অস্তিত্ব নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। মুন্নার স্মরণে ধানমন্ডির ৮ নম্বর সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে। মোনেম মুন্না সেতু যেটা আমরা অনেকেই জানি না। অযত্মে অবহেলায় ফলক চোখ এড়িয়ে যায়।
ফুটবলে সোনালি যুগ মহানায়ক মোনেম মুন্না ভুলে গেছি আমরা