
অল্পের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেল সুন্দরবন। সোমবার বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির কাছে ২৭নং কম্পর্টমেন্টের বনে আগুন লেগে যায়। এতে প্রায় ২০০ বর্গমিটার বনভূমি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সোমবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে বনবিভাগ প্রথমে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে শরণখোলা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট সেখানে গিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
তিন বছর পর আবার সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বনবিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে নতুন করে আগুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বনের অগ্নিকাণ্ড এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. এনামুল হককে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা অসিত কুমার রায় ও লন চাঁদপাই রেঞ্জের ফরেস্ট রেঞ্জার ওবায়দুর রহমান। তদন্ত কমিটিকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বনবিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে গত ১৫ বছরে ২৭ বার আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ৮০ একর বনভূমি। এর আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৬ মে পূর্ব সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আওতাধীন আবদুল্লাহর ছিলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই আগুনে প্রায় পাঁচ একর বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, দুপুর সোয়া ১টার দিকে স্থানীয় বন সুরক্ষা কমিটির (সিপিজি) সদস্য সোলায়মানের মাধ্যমে তারা আগুনের খবর জানতে পারেন। এ সময় দ্রুত গ্রামবাসীকে খবর দিয়ে কলস, বালতি নিয়ে আগুন নেভানোর জন্য ছুটে যান। এর পরপরই খবর পেয়ে শরণখোলা ফায়ার স্টেশনের ২০ সদস্যের একটি দল গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ভোলা নদীতে পাইপ বসিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।
আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিস, বনবিভাগ, ভিটিআরটি, সিপিজি, পিএফ সদস্য ও স্থানীয় মিলে দুই শতাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন। প্রায় চার ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্থানীয় সমাজসেবক মো. কামাল হোসেন তালুকদার ও ইউপি সদস্য হুমায়ুন করিম সুমন জানান, সকাল ১০টার দিকে গোপনে ৫-৬ জন অজ্ঞাত যুবক বনের ওই এলাকায় প্রবেশ করে। হয়তো তারা বনের মধ্যে বসে বিড়ি-সিগারেট খেয়েছে। সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ বনে ছুড়ে ফেলায় সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষণ (এসিএফ) মো. এনামুল হক জানান, বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে গোপনে কয়েকটি ছেলে সেখানে প্রবেশ করে। হয়তো তারা বিড়ি-সিগারেট খেয়ে অবশিষ্ট অংশ বনে ফেলে। সেখান থেকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। আগুনে প্রায় পাঁচ শতাংশ বনের আগাছা, লতাগুল্ম পুড়ে ঘেছে। আগুন যাতে বনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সাত শতাংশ এলাকাজুড়ে ফায়ার লেন কাটা হয়।
শরণখোলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা এম আব্দুল ওদুদ জানান, সুন্দরবনে আগুন লাগার সঠিক কারণ জানা যায়নি। বন বিভাগ ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, সিগারেটের নিক্ষিপ্ত আগুন থেকে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের ২০ সদস্যের টিম, বন বিভাগ ও স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় চার ঘণ্টার পর আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, বন বিভাগের প্রচেষ্টায় সুন্দরবন বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমি সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।
এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে।