পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় গৃহবধূকে এ কেমন নির্যাতন!

ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২০, ১০:৩৮ পিএম

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার রান্দিয়া গ্রামে স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেয়া ও যৌতুক না দেয়ায় গৃহবধূর ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে স্বামী, শ্বশুর, ননদ ও দেবররা। ওই গৃহবধূকে মারধর করে মুখের দাঁত ফেলে দেয়া, জিহ্বায় কাটা কম্পাস ঢুকিয়ে দেয়া ও পায়ের রগ কেটে ফেলার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনার পর আহত গৃহবধূ জান্নাত আক্তার ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। এ ঘটনায় আহত জান্নাত বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ভালুকা মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা যায়, গত দেড় বছর পূর্বে উপজেলার পুরুড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুর জব্বারের মেয়ে জান্নাত আক্তার পাশের রান্দিয়া গ্রামের মেহের আলীর ছেলে সাঈদ আহম্মেদ জজের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হয়। বিয়ের পর মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে জান্নাতের বাবা কয়েক ধাপে দুই লাখ টাকা যৌতুক দেন। এছাড়াও এক লাখ ২০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার দেন।
বিয়ের পর জজ ও জান্নাত দম্পতি পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলার জয়নাবাজার এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে দুজন দুই পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। বিয়ের পর থেকে জজ ফেসবুকে বিভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে চ্যাটিং ও মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
গত ১০ আগস্ট জজ তার স্ত্রীর কাছে তিন লাখ টাকা যৌতুক চায়। সেই টাকা দিতে অস্বীকার করলে জজ তার স্ত্রীকে বেদম মারপিট করে। এ সময় জান্নাতের বাড়ির লোকজন খবর পেয়ে সেখান থেকে জান্নাতকে তার বাপের বাড়িতে নিয়ে আসেন। ওই ঘটনায় জান্নাত ভালুকা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
কয়েক দিন যাবত জজ তার স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলা শুরু করে। জজ আশ্বাস দিলে বাড়ির লোকজনকে না জানিয়ে গোপনে মঙ্গলবার স্বামীর বাড়িতে চলে যায় জান্নাত। জান্নাত বাড়িতে ঢোকার ঘণ্টাখানেক পর তার স্বামী ঘরে ঢুকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মারধর শুরু করে। এ সময় জান্নাতের ননদ লাইলী বেগম, শ্বশুর মেহের আলী, দেবর আতা ও রাকিব মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন শুরু করে।
ঘটনার সময় লাইলী বেগমের হাতে থাকা রুটি বানানোর বেলন দিয়ে জান্নাতের মুখে আঘাত করলে তার ডান পাটির একটি দাঁত ভেঙে পড়ে যায়। তার স্বামী কাটা কম্পাস দিয়ে তার জিহ্বা ফুটো করে ফেলে। তার শ্বশুর মেহের আলী ব্লেড দিয়ে জান্নাতে ডান পায়ে রগ কেটে ফেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তারা জান্নাতকে মারধর করে আহত করে বাড়িতে আটকে রাখে।
সন্ধ্যায় জান্নাতের পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ওই গৃহবধূর দেবর রাকিব বলেন, আমার ভাই প্রেম করে বিয়ে করছে। তাদের মাঝে বিভিন্ন সময় ঝগড়া হতো। আমার ভাই কোনো যৌতুক নেয়নি ও চাইনি। আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় ভাবি সকালে আমাদের বাড়িতে আসে।
ভালুকা থানার এসআই আবদুল লতিফ জানান, অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গেলে বাড়ির লোকজন কাউকেই পাইনি। আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি।