সদ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু
বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৪৫ পিএম
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে হিন্দু থেকে সদ্য মুসলমান হওয়া এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহত যুবকের নাম সুমন চন্দ্র দাস (২২)। ইসলাম গ্রহণের পর তার নাম হয় যুবায়ের ইসলাম।
তিনি বন্দরের আমিন আবাসিক এলাকার ২নং গলির নারায়ণ চন্দ্র দাসের ছেলে। সুমন শুক্রবার রাতে বন্দর রেললাইন এলাকার ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে বলে এলাকাবাসী জানান।
অপরদিকে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে নিহত সুমনের বাবা অভিযোগ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্ত্রী ফিদা ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।
এলাকাবাসী ও তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানার এসআই ফয়েজ হোসেন জানান, বন্দরের আমিন আবাসিক এলাকার ২নং গলির নারায়ণ চন্দ্র দাসের ছেলে সুমন চন্দ্র দাস দেড় মাস আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হিন্দু থেকে মুসলমান হন। এক সপ্তাহ আগে বন্দরের নবীগঞ্জ বাগবাড়ি এলাকার ফিদা ইসলাম নামে এক মেয়ের সঙ্গে ফেইসবুকের মাধ্যমে তার পরিচয় হয়।
তিনদিন আগে ফেইসবুক বন্ধু ফিদা ইসলামকে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে আসেন সুমন চন্দ্র দাস ওরফে যুবায়ের ইসলাম। এ সময় নারায়ণ চন্দ্র দাস ছেলেকে ভর্ৎসনা করে বলেন, আমরা হিন্দু কিন্তু তুমি বিয়ে করেছ মুসলমান, তা কি করে হয়। তিনি ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বন্দর রেললাইন এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করেন।
এসআই ফয়েজ হোসেন আরো জানান, শুক্রবার রাতে সুমনের পরিবারের কাছে খবর পাই ছেলেটাকে মেরে ফেলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারি তার স্ত্রী আত্মহত্যার বিষয়টি প্রতিবেশীদের জানান। প্রতিবেশীদের সহায়তায় সুমনের ঝুলন্ত দেহ নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান এলাকাবাসী। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন সুমনের শরীরে ছোট ছোট আঁচড়ের চিহ্ন রয়েছে। হাতে ব্লেডে কাটা চিহ্ন এবং গলায় হালকা দাগ পাওয়া গেছে। লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে সুমনের স্ত্রী দাবিদার ফিদা ইসলাম বিয়ের কোনো কাগজপত্র বা কাবিননামা দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।
সুমনের স্ত্রী ফিদা ইসলাম বলেন, বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর সুমন বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন। এরপর তিনি ঘুমের ট্যাবলেট খেতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খান এবং ব্লেড দিয়ে নিজের হাত নিজে কাটেন। শুক্রবারও ঘুমের ট্যাবলেট খান। রাতে গলায় হিজাব পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে আমি প্রতিবেশীদের জানাই। তাদের সহায়তায় সুমনকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
সুমনের বাবা নারায়ণ চন্দ্র জানান, শুক্রবার রাতে এলাকার কিছু লোক তার ছেলে সুমনের লাশ বাড়িতে দিয়ে যায়। তারা জানায় সুমন স্ট্রোক করে মারা গেছে।
তিনি বলেন, সুমন স্ট্রোক করে মারা যায়নি, এটা একটি হত্যাকাণ্ড। আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে বন্দর থানার ওসি ফখরুদ্দিন ভুইয়া বলেন, সুমনের কিছু বন্ধু শুক্রবার রাতে লাশ বাড়িতে দিয়ে আসে। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া পর বলা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা। এ ছাড়া সুমনের পরিবার থেকে অভিযোগ করা হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।