নৌকার মাঝি আবেদা বেগমের ২০ বছরের সংগ্রাম

শামীম শেখ, গোয়ালন্দ
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৫:১৬ পিএম

সংসারের প্রয়োজনে একজন নারী যে কতটা সংগ্রামী হতে পারেন তার এক অনন্য উদাহরণ আবেদা বেগম (৫৫)। সংসারের প্রয়োজনে ২০ বছর ধরে তিনি খেয়া নৌকার মাঝির কাজ করছেন।
প্রথম দিকে সমাজের লোকজন কিছুটা বাঁকা কথা বললেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। এখন তিনি এলাকার এক পরিচিত ও প্রিয় মুখ। নৌকা চালান স্থানীয় পিয়ার আলীর মোড় সংলগ্ন মরা পদ্মার ক্যানালে। বছরের ৬/৭ মাস এখানে নৌকা চলে। বাকি শুকনো সময় তাকে বেকার থাকতে হয়।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর কাওয়ালজানি গ্রামে তার বসতি। স্বামীর নাম আনছার শেখ (৬৩)। ৫ মেয়ে ও ১ ছেলে তাদের সংসারে। পদ্মা নদীর ভাঙনের মুখে থাকায় ভাঙন আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে গত বছর হতে অন্যের বাড়ির আঙিনায় কোনোমতে মাথা গুঁজেছেন।
সরেজমিন আলাপকালে আবেদা বেগম বলেন, খুব অল্প বয়সে দরিদ্র পরিবারে আমার বিয়ে হয়। স্বামী খেয়া নৌকা চালাত। তার সামান্য আয় দিয়ে সংসার চলতো না। তারপর মাঝে মধ্যে অসুখ-বিসুখে নৌকা চালাতে পারত না। লোকজন ডাকাডাকি করতে বাড়িতে চলে আসতো।
বাধ্য হয়ে মাঝে মধ্যে লাজলজ্জা ফেলে আমিই নৌকা চালাতে চলে যেতাম। এভাবেই নিয়মিত নৌকা চালানো শুরু করি। স্বামীকে অন্য কাজ করতে বলি। দুজনের আয়ে মোটামুটি চলতে থাকে সংসার। এ অবস্থায় একে একে তাদের ৫টি মেয়ে ও সর্বশেষ ১টি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।
তিনি বলেন, ৪টি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়েটিকে খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছি। এবার সে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। ছেলেটা ক্লাস ফোরে পড়ে।
আবেদা বেগম বলেন, ২ বছর হলো স্বামী অসুস্থ হয়ে ঘরে পড়ে গেছে। কোনো কাজ করতে পারে না। আমারও আগের মতো শরীর চলে না। দিনে দেড়শ, দুইশো টাকার বেশি আয় করতে পারি না। নৌকাটাও ভেঙে গেছে। টাকার অভাবে মেরামত করতে পারছি না। তার উপর ঘাট মালিকের বাৎসরিক টাকার চাপ রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তারা সরকারি তেমন কোন সাহায্য সহযোগিতা পান না। নদী ভাঙনের মুখে থাকায় অন্যের বাড়িতে কোনো রকমে আশ্রয় নিয়ে আছেন। কিন্তু কেউ খোঁজ নেয় না। সামনের দিনগুলো হয়তো আরও কষ্টের হবে।
তিনি বলেন, ছেলেমেয়ে দুইডারে একটা গতি করে না দিতে পারলে মইরাও যে শান্তি পাব না।
এ প্রসঙ্গে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর বয়স পূর্ণ না হওয়ায় ভাতার আওতায় আনা যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন জরুরি মুহূর্তে তাদের সরকারি ১০ কেজি করে চাল দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। আগামীতে তাদেরকে মাসিক ভিজিডির খাদ্য সহায়তার আওতায় আনার চেষ্টা করব।