আল্লামা শফীর কবরে এখনও ভক্ত-অনুরাগীদের ভিড়
আবু তালেব, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৩১ পিএম
ছবি: ডয়চে ভেলে
চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অধীনে দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত মজলিসে শূরার বৈঠকে শূরার নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তিসহ নানা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এছাড়া ওই বৈঠকে রোববার থেকে মাদ্রাসার ক্লাস যথারীতি চলার সিদ্ধান্ত হলেও মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষের ক্লাস বন্ধ ছিল।
জানা গেছে, সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে রোববার পরীক্ষা শুরু হবে কিনা তা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের সংশয় ছিল। তবে শনিবার হাইআতুল উলয়ার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাইল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পূর্ব উল্লেখিত সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশের মতো হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রায় ১৪শ' শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এসব পরীক্ষার্থী মাদ্রাসার শিক্ষা ভবনের হল রুমে বসে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
পরীক্ষা শুরুর আগে শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীরা সদ্যপ্রয়াত মাদ্রাসাটির সাবেক মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর রুহের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
এর আগে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক ও প্রধান শায়খুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী উপস্থিত থেকে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করেন।
পরীক্ষায় অংশ নেয়া মঞ্জুরুল হাসান নামে এক পরীক্ষার্থী যুগান্তরকে জানান, পরীক্ষা শুরুর আগে আমরা সবাই বড় হুজুরের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। যদিও তার (হুজুর) চলে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারছি না। যেহেতু এটা একটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষা, তাই আমাদের বাধ্য হয়ে অংশ নিতে হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক ও হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) পরীক্ষা ১০ বিষয়ের হবে। আজ পরীক্ষা ৩ ঘণ্টাব্যাপী সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বর্তমানে ৬টি বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের সব দাওরায়ে হাদিস কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা হাইয়াতুল উলয়ার অধীনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এ পরীক্ষা শেষ হবে ২৯ সেপ্টেম্বর।
শনিবার সন্ধ্যায় মজলিসে শূরার বৈঠকে শূরায় কয়েকজন নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরা হলেন- মারকাজুদ দাওয়ার মাওলানা আবদুল মালেক (ঢাকা), মাদানীনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ফয়জুল্লাহ (ঢাকা), বাথুয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ শফি (হাটহাজারী), চারিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল্লাহ (হাটহাজারী) ও মাওলানা শাহাদাত হোসেন (রাঙ্গুনিয়া)।
আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যু মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, ভক্ত ও অনুরাগীদের এখনও কাঁদিয়ে যাচ্ছে। ভক্ত-অনুরাগীরা এখনও ভিড় করছেন আল্লামা শফীর কবরের পাশে। তাদের অশ্রুজলে সিক্ত হচ্ছে তার কবর।
দাফনের পর থেকেই তার কবর জিয়ারত করা অব্যাহত রেখেছে ছাত্র, আলেম-ওলামা, জনসাধারণ ও পথচারী। এ সময় মোনাজাতে অনেককে চোখে অশ্রুসিক্ত হতে দেখা গেছে।
টাঙ্গাইল থেকে আগত মুফতী সাইফুল ইসলাম জানান, আমি হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র। বড় হুজুরের কাছে বুখারী পড়ার স্বপ্ন ছিল। আমার স্বপ্ন আল্লাহ কবুল করেছেন। হুজুরের মৃত্যুর খবর শুনার পর ৭০ জনের একটি কাফেলা নিয়ে জানাজায় এসেছি। অধিকাংশ সঙ্গী চলে গেলেও আমি রয়ে গেছি।
তিনি বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা আমার জীবন পরিবর্তনে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। এ মায়া ছেড়ে চলে যেতে মন চাইছে না। বড় হুজুরের জন্য মনে কাঁদছে। শতবর্ষী এই মহান নেতা ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বিয়োগ দেশের ধর্মীয় অঙ্গনে কতটা শূন্যতা তৈরি করেছে তা আদৌ পূরণ হবে কিনা তা বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।
প্রসঙ্গত, আল্লামা আহমদ শফী ছিলেন একাধারে দেশের সর্ববৃহৎ কওমি মাদ্রাসার প্রাক্তন মহাপরিচালক, সম্মিলিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হাইয়াতুল উলয়ার চেয়ারম্যান এবং হেফাজতে ইসলামের আমীর।
দেশের ইতিহাসে একই সঙ্গে এতগুলো শীর্ষপদে থেকে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করা আল্লামা আহমদ শফী গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গেণ্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।