ঝিনাইদহে চেয়ারম্যান লাঞ্ছিত, এসআই ক্লোজড
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:২৭ পিএম
ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ হাসান মামুনকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি।
পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, এ ব্যাপারে আজো কেও লিখিত অভিযোগ করেননি। তবুও ভিডিও ফুটেজ দেখামাত্রই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট থানার এসআই সাখাওয়াত হোসেনকে পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শৈলকূপা সার্কেলের এএসপি আরিফুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
ঘটনার বিষয়ে শৈলকূপা উপজেলার ৬ নং সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান মামুন জানান যুগান্তরকে জানান, ৭ সেপ্টেম্বর বিকালের দিকে ইউনিয়নের কাতলাগাড়ি বাজারের গরু হাটের ইজারা নিয়ে এলাকার দুইটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। উভয়পক্ষের লোকজন ঢাল ভেলা নিয়ে সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে আসে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি বলেন, একই দিন রাতে পুরাতন বাখরবা গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি আহত হয়। আহতদের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়।
চেয়ারম্যান বলেন, খবর পেয়ে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে আসেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাদা পোষাকে শৈলকূপা থানার এসআই সাখাওয়াত, এসআই রফিকুল এবং এএসআই রেজায়ানুল হকসহ কয়েকজন। হাসপাতালে উপস্থিত গ্রামের সাধারণ লোকজনকে ধরে ধরে একটি ইজিবাইকে তোলা শুরু করে দেয় তারা।
তিনি বলেন, লোকজনকে কেন ধরা হচ্ছে? জানতে চাওয়া মাত্রই প্রথমে আমার বুকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলা দেয়। পরে লাথিসহ মারপিট করা হয় আমাকে।
চেয়ারম্যান আরও অভিযোগ করেন, এ সময় গায়ে থাকা গেঞ্জি ছিঁড়ে দেয় পুলিশ। এমনকি জোর করে একটি ইজিবাইকে তুলে থানায় নেয়ার চেষ্টা করা হয় তাকে।
ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। একই দিন গভীর রাতে শৈলকূপা থানার বর্তমান ওসি জাহাঙ্গীর আলম তার কাছে অন্য এক দারোগার মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন করেন। ফোনে ওসি তাকে বলেছেন- কপাল ভাল, আমি হাসপাতালে ছিলাম না। সবার আগে আপনার হাতে হ্যান্ডকাপ লাগতো। বেশি বাড়াবাড়ি করতেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেব। ওসির দেয়া এ ধরনের হুমকির পরে আত্মগোপন করে আছেন মর্মে জানান ওই চেয়ারম্যান।
অপর দিকে পুলিশ লাইনসে ক্লোজড থাকা এসআই সাখাওয়াত হোসেন বুধবার বিকালে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ঘটনার দিন গত ৭ সেপ্টেম্বর একই ইউনিয়নের টিপু গ্রুপের লোকজনকে চেয়ারম্যান গ্রুপের লোকজন মারধর করে জখম করে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান গ্রুপের ৫ জন এবং টিপু গ্রুপের ৭ জনকে আটক করা হয়। রাতে ৫/৬টি মোটরসাইকেল চড়ে শৈলকূপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন চেয়ারম্যান মামুন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানকে সরে যেতে বলেছেন, এর বেশি কিছু ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।
শৈলকূপা থানার ওসির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে এসআই সাখাওয়াতকে বুধবার পুলিশ লাইনসে ক্লোজড করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে সাদা পোশাকধারী পুলিশ কর্তৃক লাঞ্ছিত হওয়ার সময় সিসিটিভিতে ধারণ করা ভিডিও এবং মোবাইল ফোনে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলমের দেয়া হুমকির কথোপকথনের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।