
প্রিন্ট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০১ পিএম
জন্মের আগেই দাখিল ও পরে আলিম পাস

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৫১ পিএম

আরও পড়ুন
নওগাঁর রানীনগরে এক শিক্ষকের সনদপত্র ঘষামাজা (টেম্পারিং) করে জন্মের এক বছর আগে দাখিল ও জন্মের এক বছর পর আলিম পাসের অভিযোগ উঠেছে বেলাল হোসেন নামে এক ভুয়া কাজির বিরুদ্ধে।
সনদপত্র জালিয়াতি করে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রার করে আসছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সমিতিভুক্ত কাজিরা।
জানা যায়, রানীনগর উপজেলার ৫নং বড়গাছা ইউনিয়নের গহেলাপুর গ্রামের নাজিম উদ্দীনের ছেলে বেলাল হোসাইন। রানীনগর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসা থেকে পাসের সনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৮৪ সাল।
কিন্তু জন্মের এক বছর আগে ১৯৮৩ সালে দাখিল ও জন্মের এক বছর পর ১৯৮৫ সালে আলিম পাস করার সনদপত্র দাখিল করে ২০০৩ সালে কাজির লাইসেন্স বাগিয়ে নেন তিনি। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও ২০০৩ সালে কীভাবে কাজির লাইসেন্স পান বেলাল হোসেন তা নিয়ে সচেতন মহলে রীতিমতো হৈ চৈ পড়ে যায়।
উপজেলার মালঞ্চি গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দীনের ছেলে রানীনগর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক বেলাল উদ্দীন বগুড়ার কাহালু উপজেলার মাগুরা এমইউ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৩ সালে দাখিল ও ১৯৮৫ সালে আলিম পাস করে রানীনগর আল-আমিন দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন।
আর এই শিক্ষকের দাখিল ও আলিম পাসের সার্টিফিকেট সুকৌশলে সংগ্রহ করে ঘষামাজা (টেম্পারিং) করে প্রকৃত নামের উপর মো. বেলাল হোসাইন, পিতা মো. নাজিম উদ্দিন নাম বসিয়ে তিনি রানীনগর উপজেলার ৫নং বড়াগাছা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) নিয়োগ লাভ করে।
তখন থেকেই নিজের খেয়াল-খুশি মতো নিয়মবহির্ভূত ও অবৈধভাবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। কাজি বেলাল অর্থের বিনিময়ে জালিয়াতি করা সার্টিফিকেট দাখিল করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজির) লাইসেন্স বাগিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কাজী বেলাল হোসেন বলেন, আমার সব কাগজপত্র সঠিক আছে। সব সনদপত্রসহ কাগজপত্রাদি সংশ্লিষ্ট দফতরে দেয়া আছে।
আল আমিন দাখিল মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক ও প্রকৃত সার্টিফিকেটধারী বেলাল উদ্দিন বলেন, বেলাল হোসেন পড়াশোনায় খুবই দুর্বল ছিল। সে দাখিল পরীক্ষায় ফেল করে। এরপর কোথায় পড়ালেখা করেছে তা আমার জানা নেই। পরবর্তী সময়ে জানতে পারি সে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমার সনদপত্রগুলো সংগ্রহ করে।
এ বিষয়টি আমি সেই সময়ের মাদ্রাসা সুপারসহ একাধিক ব্যক্তিকে জানালে তারা সেই বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা আমার জানা নেই। কারণ ২০০৫ সালে আমি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসি। তাই পরবর্তী বিষয়গুলো আমার জানা নেই।
আল আমিন দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার হারুনুর রশিদ বলেন, ২০০০ সালের দিকে আমি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। বেলাল হোসেন ২০০০ সালে আমার মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে ফেল করে। এরপর সে কোথায় লেখাপড়া করেছে তা আমার জানা নেই। তবে সে কোনো এক মাধ্যম দিয়ে বেলাল উদ্দিনের সার্টিফিকেটগুলো নিয়েছিল, যা আমি লোকমুখে শুনেছিলাম।
নওগাঁ জেলা কাজি সমিতির সাবেক সভাপতি সামছুর রহমান বলেন, বেলাল হোসেন একজন প্রতারক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। সাধারণ মানুষ বুঝতে না পেরে তাকে দিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে থাকেন। আমার এলাকায় এসে একবার বিয়ে পড়ানোর সময় হাতেনাতে আটক করি। সেবার তার ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যায়। বিষয়টি অনেকবার জেলা রেজিস্ট্রারকে অবগত করা হয়েছে।
নওগাঁ জেলা কাজি সমিতির সভাপতি কাজি আমিনুল ইসলাম বলেন, বড়গাছা ইউনিয়নে আমাদের সমিতিভুক্ত কাজি মোজাফ্ফর হোসেন থাকার পরও বেলাল হোসেন নিজেকে আসল কাজি দাবি করেন। তিনি আমাদের সমিতিভুক্ত না। আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাই।
নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম বলেন, নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি অবগত না।