কুড়িগ্রামে বন্যায় বালুতে ঢেকে গেছে এক হাজার হেক্টর জমি
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৫৬ পিএম
অনাবাদী কৃষি জমি
বানের পানি নামলে অন্যান্য বছরের মতো আমন আবাদের স্বপ্ন ছিল কৃষক দেলোয়ার হোসেনের। কিন্তু পানি নামার পর দেখা গেল ৩ বিঘা জমির পুরোটাই বালুতে ঢেকে অনাবাদি হয়ে গেছে। পরিবারের খাবার জোগাতে বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় যেতে হয়েছে। কুড়িগ্রাম সদরের চর সারডোবের দেলোয়ার হোসেনের মতো অনেক কৃষকের কপালে আসন্ন খাদ্য সংকটের আশঙ্কা। সরকারি তথ্যমতে, এক লাখ ৩৫ হাজার কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা মূল্যের ফসল।
সারডোব গ্রামের কৃষক দুখু মিয়া বলেন, ‘হামার টাকা পইসা নাই। বালা সরাই কেমন করি। সরকার সাহায্য করলে হামরা মিষ্টি কুমড়া আর ভুট্রা আবাদ করলোং হয়।’ ক্ষতিগ্রস্ত বর্গাচাষী রাবেয়া বেগম জানান, বালুজমিতে ফসল ফলাতে প্রচুর সেচের পানি দরকার। বর্তমান অবস্থায় তাদের পক্ষে সেচের অর্থ জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। এই গ্রামের কনছার আলী জানান, নদী ভাঙনের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি হারিয়েছে এই গ্রামের অনেকেই। তার ওপর বন্যায় পাট নষ্ট ও জমিতে বালুর কারণে আমন রোপণ করতে না পারায় এই এলাকার ঘরে ঘরে এখন হাহাকার।
সরেজমিন দেখা যায়, এ বছর বন্যায় পানির ঢল, ভাঙন ও বাঁধ ভেঙে কুড়িগ্রামে কমপক্ষে এক হাজার হেক্টর আবাদি জমি ঢেকে গেছে বালুতে। গত কয়েক বছরে এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলিয়ে চরাঞ্চলের কৃষকরা অভাব মোচন করলেও এ বছর আমন চাষ করতে না পেরে খাদ্য সংকটের শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কুড়িগ্রামে ১৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার কৃষক। সরকারিভাবে টাকার অংকে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। বন্যাপরবর্তী সময়ে ১ হাজার ২০০ কৃষককে এক বিঘা করে জমি মাষকলাই চাষ করার জন্য বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৭ হাজার কৃষককে আমনের চারা ও ১০ হাজার কৃষককে শাকসবজির বীজ দেয়া হয়েছে। তবে বালু জমিতে চাষযোগ্য ফসল আবাদের জন্য এখনও কোনো বরাদ্দ আসেনি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামে মধ্য জুলাইয়ে একটি বিকল্প বাঁধ ভাঙার কারণে শত শত একর আবাদি জমিতে ৩-৫ ফুট বালুতে ঢেকে গেছে। একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী জয়কুমর ও হলোখানা গ্রামেও। এসব এলাকার কৃষকরা এবার আমন চাষ করতে না পেরে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পাশাপাশি বালুতে ঢেকে যাওয়ায় নষ্ট হয়েছে পাট, কলা, সবজি ও ভুট্রাসহ বিভিন্ন ফসল। ফলে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে হাজার হাজার কৃষক।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কৃষি কমকর্তা জাকির হোসেন জানান, বন্যায় জমি অনাবাদি ও ফসল নষ্টের বিষয়টি তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কৃষি প্রণোদনার কোনো বরাদ্দ এলে ক্ষতি পোষাতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হবে।