
প্রিন্ট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৫ এএম
নোয়াখালীতে লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে জিম্মি ৪ হাজার সিএনজি-অটোরিকশা

নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:২৭ পিএম

নোয়াখালী
আরও পড়ুন
নোয়াখালীর ৪ হাজার সিএনজি ও অটোরিকশাচালক চাঁদাবাজ লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এ লাঠি বাহিনী জেলায় প্রতিদিন ৪ লাখ ৪৪ হাজার চাঁদাবাজি করছে। চাঁদা দিতে গড়িমসি করলে চালকদের মারধর করে গাড়ি ভাংচুর করে। আর চাঁদা না দিলে গাড়ি খেয়ে ফেলে (চাঁদাবাজদের ভাষায়)। জেলার ৯টি উপজেলার ২১টি স্পট থেকে প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে ২০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়। স্পটগুলো হচ্ছে জেলা শহরের সুধারাম থানার সামনে হাসপাতাল সড়কের মাথা, মাইজদী বাজার, ইসলামিয়া সড়ক, সোনাপুর চৌরাস্তায়, কবির হাট, বসুরহাট, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সামনে, রাজগন্জ, ছয়ানী, চন্দ্রগন্জ পূর্ববাজার, বাংলাবাজার, বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা, চৌমুহনী কাচারীবাড়ি মসজিদ সংলগ্ন, জমিদার হাট, সেনবাগ রাস্তার মাথা, ছাতারপাইয়া, সেনবাগ বাজার, সোনাইমুড়ি বাইপাস, সোনাইমুড়ী বাজার, থানার হাট, চাটখিল বাজার, খিলপাড়া বাজার ও সাহাপুর বাজার। এর প্রতিটি স্পটে শিফটিং করে লাঠি হাতে চাঁদাবাজ বাহিনীর লোকেরা পাহারা দেয়। তবে বেশি বেপরোয়া বেগমগঞ্জ চৌরাস্তার চাঁদাবাজরা। তারা সিএনজি, অটোটেম্পো, বাস, ট্রাক এমনকি জেলার বাহির থেকে আসা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস কিছুই ছাড়ে না। কেউ তর্ক করলে নামিয়ে মারপিট করে এবং প্রাইভেট কারের মালিক ও যাত্রীদের অপমান করে থাকে।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন নেতা জানান, এ স্পটগুলো থেকে ২০ টাকা হারে দৈনিক ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা চাঁদা উঠে। মাসে আদায় হয় ১ কোটি ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ টাকা যারা উঠায় তারা দৈনিক হাজিরা পায় ৩০০-৫০০ টাকা। বাকি টাকা স্পটের নেতা, পাতি নেতা, থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশকে দিয়ে বাকি টাকা ভাইকে (নেতা) দিতে হয়।
তিনি আরও জানান, অর্ধেক ভাই পান বাকিটা সবাই ভাগ করে নেয়। জেলা ট্রাফিকের পক্ষে টিআই শাহীন চাঁদাবাজি চলছে অস্বীকার না করলেও চাঁদাবাজরা পুলিশকে ভাগ দেয় তা দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন রশীদ চৌধুরী জানান, চাঁদাবাজদের সাথে কোন আপোস নাই, যেখানে চাঁদাবাজি সেখানে পুলিশের অভিযান চালানো হবে।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, এরকম চাঁদাবাজির কথা তিনি জানেন না।
চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন খবরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পৌরসভার কথা বলেও চাঁদাবাজি হয়। পৌরসভা টার্মিনালের বাহিরে কোনো যানবাহনের চাঁদা তোলার অনুমতি দেয়া হয়নি। সড়কে চাঁদাবাজির জন্য পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা করার জন্য বারবার অনুরোধ করেছি। শুধু চাঁদাবাজি নয় এর সাথে মাদক ব্যবসাও চলছে।
নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদুল্লা খান সোহেল বলেন, চাঁদাবাজদের কারা প্রশ্রয় দেয় সবাই জানে। সুধারাম থানার সামনে দাঁড়িয়ে চাঁদা তোলে এরা এত ক্ষমতা পায় কোথায়?
পৌরসভার জ্যাকেট পরে চাঁদাবাজি করে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, শুধু পৌর টোল আদায়কারীদের জ্যাকেট দেয়া হয়েছে।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে।
পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, কয়েক মাস আগেও ডিবি পুলিশ দিয়ে অভিযান করে অনেকজনকে আটক করা হয়েছিল। এ অভিযান চলমান থাকবে। তিনি বলেন, চাঁদাবাজদের সঙ্গে কোনো আপোস নেই। সিএনজি সমিতির নেতারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।