মাগুরায় অগ্নিদগ্ধ সেই কলেজছাত্রীর মৃত্যু
মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:৩৬ পিএম
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার কেড়িনগর গ্রামের আকলিমা খাতুন আঁখি নামে সেই অগ্নিদগ্ধ কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আকলিমার মৃত্যৃর খরবটি জানিয়েছেন আকলিমার পিতা মো. আকরাম হোসেন। গত ১৫ আগস্ট শনিবার বিকালে অগ্নিদগ্ধ হন আকলিমা।
পরে ১৭ আগস্ট আকলিমাকে শরীরে ডিজেল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর দাদা মো. রতন আলী বাদী হয়ে মহম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন। ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৩ জনের নামে এ মামলা দায়ের করেন।
অগ্নিদগ্ধ ওই ছাত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। এ ঘটনায় ৫ জনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এদিকে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়।
আকলিমার দাদা রতন আলী বলেন, দুই বছর আগে তার নাতনি কলেজছাত্রী আকলিমা খাতুনের (১৮) সঙ্গে একই গ্রাম কেড়িনগরের মাসুদ মোল্যার ছেলে মামলার প্রধান আসামি নাজমুল মোল্যার বিয়ে হয়। প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হলেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় বিয়ের ৭ মাস পর আকলিমা খাতুন নাজমুলকে তালাক দেয়। বিষয়টি নাজমুল মেনে নিতে পারেনি।
কিছু দিন পর থেকে নাজমুল আকলিমাকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। আকলিমা তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নাজমুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং হুমকি দেয়- তোরে এসিড মারব, তোর ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেব। বিষয়টি আকলিমা তার পরিবারকে জানায়।
এরই মধ্যে গত ১৫ আগস্ট শনিবার বিকালে ওই ছাত্রী বাথরুমে যাওয়ার সময় ওতপেতে থাকা নাজমুলের লোকজন আকলিমার ব্যবহৃত ওড়না দিয়ে তার বিভিন্ন স্থানে বাঁধে এবং ডিজেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আগুনে আকলিমার শরীরে বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায় এবং সে ডাক-চিৎকার শুরু করে।
তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে আসে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে এবং পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে মামলার প্রধান আসামির চাচি রত্না ও স্বজনরা বলেন, নাজমুল মরতে রাজি কিন্তু ওই মেয়েকে ছাড়া বিয়ে করবে না। মেয়েও তার কাছে দুই বছরের সময় চেয়েছিল। ঘটনার তিন-চার দিন আগে নাজমুল গ্রাম্য মাতুব্বরদের ডেকে আনে এবং ওই মেয়েকে চায়। মেয়ের পরিবার তাকে দিতে রাজি হয়নি।
এদিকে মেয়েকে অন্য ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য ছেলে দেখছিল তার পরিবার। মেয়েটিও অন্য কোথাও যাবে না বলেই আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
মহম্মদপুর থানার ওসি তারক বিশ্বাস আকলিমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলার ৫ জন আসামিকে আটক করা হয়েছে। তবে ঘটনা নিয়ে দ্বিমুখী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। গভীরভাবে তদন্ত করে এর প্রকৃত রহস্য বের করা হবে।