মদনে এতিমদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২০, ০৮:২৯ পিএম
নেত্রকোনা
নেত্রকোনার মদনে এতিমদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা সুপরিকল্পিতভাবে উত্তোলন করে, সরকারি নির্দেশনা না মেনে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কমিটির লোকজন লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জানুয়ারি-জুন মাস পর্যন্ত ৬ এতিমখানা মাদ্রাসায় ১৮৫ জন এতিমের নামে ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এতিমখানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বাবদ প্রত্যেক এতিম মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দকৃত ২ হাজার টাকা হতে খাদ্য বাবদ ১৬০০ টাকা, পোশাক বাবদ ২০০ টাকা, ওষুধ ও অন্যান্য ২০০ টাকা ব্যয় করার শর্ত রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সরকারি কোনো নিয়মনীতি মানছেন না শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সরেজমিন উপজেলার বরাটি-মোয়াটি-আকাশ্রী হাজী ওয়াহেদ আলী এতিমখানা দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসা, তালুকখানাই কামরুন্নেছা এতিমখানা, আলমশ্রী দারুসুন্নাহ কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানা,পাছআলমশ্রী এতিমখানা মাদ্রাসা ও বাশরী মমতাজ উদ্দিন এতিমখানায় পরিদর্শনে গেলে এতিমের সংখ্যা তুলনামূলক কম পাওয়া যায়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে কাগজে-কলমে এতিম দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা ব্যয় করছে সংশ্লিষ্টরা।
এ সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, বাশরী মমতাজ উদ্দিন, পাছআলমশ্রী, আলমশ্রী দারুসুন্নাহ কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানা, তালুকখানাই কামরুন্নেছা এতিমখানা মাদ্রাসার এতিমরা গ্রামের লোকজনের বাড়িতে লজিং থাকে। এতিমদের খাবারের বরাদ্দকৃত টাকা শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ভাগাভাগি করে খায়। সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী যেসব শর্তে বরাদ্দ আসে তার ছিটেফোঁটাও নেই বেশির ভাগ এতিমখানায়। তারপরও বিভিন্ন তদবিরে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এতিমখানাগুলোতে। এতিমদের টাকা যাতে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয়, সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
তালুকখানাই কামরুন্নেছা এতিমখানা মাদ্রাসার সভাপতি রফিকুজ্জামান জানান, আমাদের এতিমখানায় ২০-২২ জন এতিম আছে; সবাইকে আমরা ভরণপোষণ করি। আমার ও প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন করি। অথচ এ মাদ্রাসায় ৩৩ এতিমের নামে বরাদ্দ এসেছে।
বিনুনা হাসান এতিমখানা মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সুয়েল মান্নান সুবিধাভোগী এতিমদের তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে, কোনো সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। অথচ উক্ত মাদ্রাসা থেকে ২৭ জন এতিম সুবিধা পাচ্ছে। সরেজমিন ৫ জন এতিমকে উপস্থিত পাওয়া যায়।
বরাটি-মোয়াটি-আকাশ্রী হাজী ওয়াহেদ আলী এতিমখানা দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার জানান, আমরা ৭০ জন এতিমের ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করে গত ৬ মাসে ব্যয় করেছি।
বাশরী মমতাজ উদ্দিন এতিমখানা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতার ছেলে সেলিম আহমেদ জানান, আমার প্রতিষ্ঠানের ১৭ জন বরাদ্দ পেয়েছে। এ টাকা উত্তোলন করতে ট্রেজারিসহ বিভিন্ন অফিসে উৎকুচ দিতে হয়। এ টাকা থেকে শিক্ষকদের বেতন দেই, যা আমার হাত থেকেও অতিরিক্ত গুনতে হয়। ফলে যথানিয়মে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ জামান উদ্দিন আহমেদ জানান, এ অর্থের বরাদ্দ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমি নতুন যোগদান করেছি। তবে এ ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সরেজমিন পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এতিমদের টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে কোনো ছাড় নেই। জেলা সমাজসেবা উপপরিচালক আলাল উদ্দিন জানান, অভিযোগ পেলে আমি নিজেই পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেব।