কুড়িগ্রামে বন্যার কারণে বাড়ির উঠানে বিকল্প বীজতলা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২০, ০৫:৫১ এএম
কুড়িগ্রামে পর পর তিন দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয় আমন বীজতলার।
বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জমি তৈরি, বীজ সংগ্রহ ও বপনে বাড়তি অর্থ ব্যয়ে যখন কৃষক দিশাহারা, তখন ঘাটতি কমাতে সরকারি উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি বীজতলা, ভাসমান বীজতলা এবং বাড়ির ভেতর প্লেট পদ্ধতিতে বিকল্প বীজতলা কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
সরকারি প্রণোদনায় এসব বীজ বিনামূল্যে পেয়ে নতুন উদ্যোমে মাঠে নেমেছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় কুড়িগ্রামে ১৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার কৃষক।
সরকারিভাবে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৮১০ জন কৃষকের আমন বীজতলার ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৪০৯ হেক্টর জমিতে।
আমন বীজতলার ঘাটতি মোকাবেলায় সরকারিভাবে ১০৫টি কমিউনিটি বীজতলা, ১১২টি ট্রে বীজতলা এবং শতাধিক ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ২১ হাজার কৃষক বিনামূল্যে ২০ হাজার ৯২২ বিঘা জমিতে আমন চাষ করার সুযোগ পাচ্ছে।
বুধবার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বন্যার পানি থেকে রেহাই পেতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও সহযোগিতায় বাড়ির ভেতরের উঁচু উঠানে বীজতলা তৈরি করেছেন জেলার উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লালদীঘির পাড় এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান।
তার প্রদর্শনী বীজতলা পরিদর্শনে এসেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান, উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-এ-জান্নাত রুমি, উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল ইসলাম, পাঁচপীর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নূরুল আমিন, দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবেদ আলী সরকার, পাঁচপীর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা, কৃষক মতিয়ার রহমান, সেতু মণ্ডল, আব্দুর রহমানসহ আশপাশের কৃষকরা।
কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, বাড়ির পাশে বপন করা বীজতলা এবারের বন্যায় ডুবে যায়। এ সময় কৃষি বিভাগের কাছে পরামর্শ চাইলে তারা বাড়ির উঠানে বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেয়। তখন চারদিকে থই থই পানি। বীজ বপনের কোনো জায়গা নেই। শেষে বাড়ির ভেতরের উঠানে ট্রেতে বীজতলা স্থাপন করি। আজ ১৫ দিন বয়সী চারা দুই বিঘা জমিতে বপন করলাম। কৃষি বিভাগ থেকে রাইচ ট্রান্সপ্লান্টার মেশিন দিয়ে শতকে ১০ টাকা হারে দুই বিঘা জমিতে মাত্র ৩৩০ টাকা খরচেই রোপণের কাজ শেষ হয়ে গেল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, আমন আবাদ যাতে বিঘ্নিত না হয়, এ জন্য বন্যাপরবর্তী কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। চলতি বছর জেলায় আমন চারার ঘাটতি মোকাবেলায় ১০৫টি কমিউনিটি বীজতলা, ১১২টি ট্রে বীজতলা এবং শতাধিক ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে, যা বিনামূল্যে কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে বীজতলার ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন কৃষক।