Logo
Logo
×

সারাদেশ

দুই হাত হারিয়ে কাঁদছেন আবু বকর

Icon

পবিত্র তালুকদার, চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২০, ১০:১৬ এএম

দুই হাত হারিয়ে কাঁদছেন আবু বকর

আবুবকর। ছবি: যুগান্তর

আবু বকর (৪৮)। পেশায় ছিলেন বৈদ্যুতিক শ্রমিক। বছরখানেক আগেও সকাল হলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে পাড়ায় স্টলের চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ছুটতেন কর্মস্থলে। মাস শেষে যা আয় হতো তা দিয়ে চালাতেন সংসার।

এক বছর আগে ঠিকাদারের হয়ে পল্লী বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে দুই হাত হারিয়ে পঙ্গু হতে হয় তাকে।  

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের ভাদ্রা পূর্বপাড়া গ্রামের আবু বকরের এমন করুণ পরিণতিতে পরিবারে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার।

সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মহীন আবু বকরকে। স্ত্রী ফরিদা বেগমকে নিয়ে অর্ধহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন একসময়ের কর্মক্ষম এ ব্যক্তি। খেয়ে না খেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আবু বকর বলে জানা গেছে।

এর আগে সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করতে গিয়ে মারা যান তার একমাত্র ছেলে ফরিদুল।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, কৃষিকাজের পাশাপাশি আবু বকর পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর ঠিকাদার সাঈদ এন্টারপ্রাইজের মালিক আবু সাঈদের আওতায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

২০১৯ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকে পল্লী বিদ্যুতের কাজে ঠিকাদার আবু সাঈদ আবু বকরসহ বেশ কিছু শ্রমিককে পাবনার হাঁড়িবাড়ি এলাকায় বিদ্যুতের লাইন মেরামত করতে নিয়ে যান।

দুর্ঘটনার দিন সংযোগ বন্ধ না করেই বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠেন আবু বকর। ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের তারে হঠাৎ-ই জড়িয়ে পড়ে খুঁটির সঙ্গে ঝুলে থাকেন তিনি। তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় অন্য শ্রমিকরা উদ্ধার করে প্রথমে পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তাকে স্থানান্তর করা হয়।

দীর্ঘ দেড় মাস চিকিৎসার পর প্রাণে বাঁচলেও দুই হাত কেটে ফেলতে হয় আবু বকরের। তার পুরো চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেন ঠিকাদার আবু সাঈদ।

তবে দুই হাত হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়ায় স্ত্রীকে নিয়ে অর্ধহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারটি। তাদের এমন করুণ অবস্থা দেখে কয়েক মাস আগে স্থানীয় ইউপি সদস্য একটি ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন।

সেদিনের ঘটনা মনে করে ডুকরে ডুকরে কেঁদে ওঠেন আবু বকর। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘একমাত্র ছেলে মারা গেছে। এখন আমিও প্রতিবন্ধী। নিজেকে প্রতিবন্ধী ভাবতে খুব কষ্ট হয়। প্রাকৃতিক কাজ সারতে পারি না। স্ত্রীর সাহায্যে আমাকে চলতে হয়। আমি এখন পরিবারের কাছে বোঝা।’

স্ত্রী ফরিদা বেগম যুগান্তরকে বলেন, ‘একমাত্র ছেলে মারা যাওয়ার পর স্বামীর এমন করুণ পরিণতি হবে ভাবতেও পারিনি। আমাদের কোনো আয় নেই। কীভাবে চালাব সংসার? খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে।’

তবে সমাজের বিত্তবানরা সহযোগিতা করলে বা বাড়ির সামনে একটা দোকান করে দিলে কষ্ট লাঘব হতো বলে জানান তিনি।

ঠিকাদার আবু সাঈদ যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার দিন বিদ্যুতের লাইন বন্ধ না করে আবুবকরকে বিদ্যুতের খুঁটিতে উঠতে বারণ করার পরও তিনি ওঠেন এবং দুর্ঘটনার শিকার হন। তার পুরো চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেছি এবং নগদ টাকা সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। তবে কাজ না থাকায় সত্যিই তিনি পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

আবু বকরকে সহযোগিতা করতে চাইলে এই নাম্বারে যোগাযোগ করা যেতে পারে- ০১৭৮৫-৩০০৪০৬ (বিকাশ)।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম