যুবলীগ নেতার নির্যাতনে পঙ্গু মুহুরি মুনসুর

জামালপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২০, ০৮:০২ পিএম

গোলাম মওলা মনি
যুবলীগ নেতা গোলাম মওলা মনি ও তার সহযোগীদের হাতে বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে জামালপুরে আইনজীবীর সহকারী (মুহুরি) মুনসুর রহমান পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। তার কলেজপড়ুয়া দুই মেয়ে ও স্ত্রী-পুত্র নিয়ে জিম্মি অবস্থায় জীবনযাপন করছে পরিবারটি। তাকে নির্যাতনের মামলাটির পুলিশি তদন্ত কার্যক্রমও থমকে আছে। তবে পুলিশ বলছে মেডিকেল সার্টিফিকেট হাতে পেলেই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের কুটামনি গ্রামের মুহুরি মুনসুরের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী আজিজুর রহমানের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। সেই বিরোধের জের ধরে ২০০২ সালে আজিজুর রহমান, তার ছেলে গোলাম মওলা মনি ও তাদের সহযোগীরা মুনসুরের খামারবাড়িতে হামলা চালায়। ওই হামলায় প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মুনসুরের ভাই মামুনের স্ত্রী রোকেয়া বেগম খুন হন। এরপরও ওই পরিবারটির ওপর থেমে নেই গোলাম মওলা মনির নেতৃত্বে অত্যাচার-নির্যাতন।
প্রভাবশালী বাবার পথ ধরে এলাকায় আধিপত্য বহাল রাখতে আজিজুর রহমানের ছেলে জেলা যুবলীগের সদস্য গোলাম মাওলা মনি ও তাদের লোকজনদের ধারাবাহিক নির্যাতন, হুমকি ও ভয়ভীতির মধ্যে মুনসুরও রেহাই পাননি।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, পূর্ব বিরোধের জের ধরে গত ২৬ এপ্রিল সকালে মুনসুর বাড়ির কাছে জমিতে পানি সেচ দিতে গেলে গোলাম মওলা মনি, তার বাবা আজিজুর রহমান, ভাই গোলাম মওলা মুক্তাসহ ৪-৫ জন লোহার রড ও শাবল দিয়ে মুনসুরের শরীরে বর্বর নির্যাতন চালায়। হামলাকারীরা তার দুই পা ও দুই হাত রড ও শাবল দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। স্বজনরা মুনসুর রহমানকে ওই দিনই ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার বাম পা হাঁটুর ওপর পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়। তার ডান পা ও ডান হাতটিও প্রায় অচল। আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না তিনি। বর্তমানে পঙ্গু অবস্থায় বাড়িতে রয়েছেন মুনসুর।
মুনসুরকে বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় তার ভাতিজা শওকত হোসেন বাদী হয়ে ১৩ মে গোলাম মওলা মনি, তার বাবা আজিজুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করে জামালপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির প্রধান আসামি গোলাম মওলা মনি রাজনীতির প্রভাব খাটানোর কারণে মামলাটির পুলিশি তদন্তও থমকে আছে। আসামিরা ঘটনার পর আদালত থেকে জামিন নিয়ে মামলা তুলে নিতে নির্যাতিত মুনসুর রহমানের দুই মেয়েসহ স্ত্রী-পুত্রকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে রেখেছে। আসামিরা মামলার বাদী শওকতকেও হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অসহায় মুনসুরের সংসারে স্ত্রী মমতাজ বেগম, বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস মীম জামালপুর সরকারি জাহেদা সফির মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী, মেজো মেয়ে মাওয়াতুল ফেরদৌস জিম এবার এসএসসি পাস করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করেছে। একমাত্র ছেলে মুরশাহিদ বিন আলিফ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। প্রতিপক্ষের হুমকিতে তারা সবাই বাড়িতে জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। তার দুই মেয়ের অভিযোগ, বাড়ি থেকে বের হলে গোলাম মওলা মনি ও তার লোকজন তাদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে।
মেজো মেয়ে মাওয়াতুল ফেরদৌস জিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানায়, ওরা আমার আব্বুকে মেরে পঙ্গু করেছে। আব্বু আর হাঁটতে পারবে না। ওরা হুমকি দিয়ে বলেছে দুই বোনকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। খুবই ভয় ও কষ্টে আছি। বাড়ির বাইরে যেতে পারি না। আব্বুকে যারা পঙ্গু করেছে তাদের কঠিন বিচার চাই। আমরা নিরাপদে থাকতে চাই।
যুবলীগ নেতা গোলাম মওলা মনি প্রতিপক্ষের অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, মুনসুর রহমান আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা জামিনে আছি। মুনসুর রহমান ও তার পরিবারের কাউকেই আমি বা আমার পরিবারের কেউ কোনো প্রকার হুমকি দেইনি। তার দুই মেয়েকে তো আমি চিনিই না। এলাকার একটি মহল নতুন করে আবার আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
জামালপুর সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল হাসান বলেন, মামলাটির পাঁচজন আসামি জামিনে রয়েছেন। মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। মুনসুর রহমানের চিকিৎসার মেডিকেল সার্টিফিকেট চেয়ে পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এখনও সেই মেডিকেল সার্টিফিকেট আসেনি। মেডিকেল সার্টিফিকেটটা হাতে পেলেই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হবে।