Logo
Logo
×

সারাদেশ

মির্জাগঞ্জে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে অবৈধ ক্লিনিক

Icon

রফিকুল ইসলাম সাদ্দাম, মির্জাগঞ্জ দক্ষিণ (পটুয়াখালী)

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২০, ১০:৩৫ পিএম

মির্জাগঞ্জে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলছে অবৈধ ক্লিনিক

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে চলছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রমরমা বাণিজ্য। 

নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গত ৫ আগস্ট উপজেলার ইসলামিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শাহজাহান জেনারেল হাসপাতাল, ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল ল্যাব ও নিউ লাইফ এক্সরে ক্লিনিক অ্যান্ড প্যাথলজির কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হলেও অবাধে চলছে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। 

এসব ক্লিনিকে বেশিরভাগ সময়েই চিকিৎসক থাকেন না। নেই প্রশিক্ষিত সেবিকা ও প্যাথলজিস্ট। ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রক্ত, মলমূত্রসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করছেন অদক্ষ কর্মীরা। ফলে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ প্রতিনিয়তই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। 

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ৬টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৩টি ক্লিনিক ও ৩টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সরকারি নীতিমালায় অন্যতম শর্ত হল নির্দিষ্ট শয্যাসংখ্যা (১০-২০), একটি প্যাথলজি বিভাগ, একটি তথ্য সেবাদান কেন্দ্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মূল্য তালিকা প্রদর্শন, অপেক্ষমাণ কক্ষ, নমুনা সংগ্রহের আলাদা কক্ষ, পৃথক পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড, কেবিন ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা থাকা। 

এছাড়া সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের উপস্থিতি, কমপক্ষে তিনজন সেবিকা ও একজন টেকনোলজিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক থাকলেও ২টি ক্লিনিক ও ২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরকারি নীতিমালার বেশিরভাগ শর্তই মানছেন না ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ। ক্লিনিকগুলোতে যোগ্যতা অনুযায়ী সেবিকা ও টেকনোলজিস্ট পাওয়া যায়নি। 

আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। অভিযোগ উঠেছে বেশির ভাগ সময় এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকের কাজ করানো হচ্ছে সেবিকা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের দিয়ে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগসাজশে কমিশন চুক্তিতে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগী পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা কারণে-অকারণে তাদের মনোনীত হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছেন। 

এছাড়া এলাকার অসাধু কিছু লোক কমিশনের লোভে এসব মানহীন প্রতিষ্ঠানে গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবার লোভ দেখিয়ে বুঝিয়ে-শুনিয়ে নিয়ে আসেন। তাছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাইকিং করে এবং প্রচারপত্র বিলি করে চালানো হয় প্রচারণা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বলেন, আসলে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবার নামে গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের জিম্মি করে টাকা আদায় করা হয়। এতে গ্রামের সাধারণ মানুষ প্রতারিত  হচ্ছেন। 
মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, সিভিল সার্জন অফিস থেকে গত ৫ আগস্ট চিঠি দিয়ে যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যাক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয় তাদের মধ্যে ইসলামিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও শাহজাহান জেনারেল হাসপাতাল নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রেখেছে। 

এ সময় কথা হয় শাহজাহান জেনারেল হাসপাতালের অর্ভ্যথনা কক্ষে থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিচয়দানকারী তানিয়া আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাসপাতালে কয়েকজন রোগী ভর্তি আছেন। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চিকিৎসা ব্যবস্থা কেন চলমান? জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। 

এ ব্যাপারে শাহজাহান জেনারেল হাসপাতালের মালিক মো. শাহনেওয়াজ চৌধুরী রোগী ভর্তির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ৫ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর আমাদের আউটডোর-ইনডোর চিকিৎসা ব্যবস্থা বন্ধ আছে। শুধুমাত্র কয়েকজন রোগী ভর্তি ছিল তাদের রাখা হয়েছে। আমাদের যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে তা সংশোধন করে পরবর্তীতে আবার আবেদন করব।

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত ৩০ জুলাই আমি নিজে মির্জাগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করে কিছু অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পেয়েছি। সরকারি শর্তানুযায়ী লাইসেন্স নবায়ন, পরিবেশ অধিদফতরের অনাপত্তি সনদ, নির্দিষ্টসংখ্যক চিকিৎসক, সেবিকা ও ফায়ার সার্ভিসের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ৫ আগস্ট থেকে ইসলামিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও শাহজাহান জেনারেল হাসপাতাল, ইউনাইটেড ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল ল্যাব, নিউ লাইফ এক্সরে ক্লিনিক অ্যান্ড প্যাথলজির সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

তবে এগুলোর মধ্যে ইসলামিয়া ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে ক্লিনিকটির অবস্থা খুবই বেহাল। এখানে সরকারি বিধিমালার অধিকাংশ শর্তই মানা হয়নি। পরিদর্শনকালে এ ক্লিনিকে চিকিৎসক, সেবিকা, এমটি ল্যাব, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র কিছুই তারা দেখাতে পারেননি। 

কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। অবৈধভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করলে প্রশাসনের সহায়তায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম