
প্রিন্ট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম
রংপুর নগরীতে বাঁশে বাঁশে বিদ্যুৎ লাইন

মাহবুব রহমান, রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২০, ১০:৫১ পিএম

আরও পড়ুন
রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যানবাহন ও হেঁটে চলাচলের রাস্তার ওপর বিদ্যুৎ লাইনের তার বিপজ্জনক অবস্থায় ঝুলে আছে। সড়কের সাথেই বাঁশের খুঁটি পুঁতে ঝোলানো হয়েছে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের তার।
তারের জটলার ভার সইতে না পেরে বাঁশের খুঁটিগুলোও নুইয়ে পড়েছে। কোথাও বা হেলে থাকা বাঁশ ঠেকনা দেয়া হয়েছে আরেকটি বাঁশ দিয়ে। খাল ও পুকুরের পানির ছুঁই ছুঁই বিদ্যুতের তারের সংযোগ। কোথাও তারে লতাপাতা জড়িয়ে তারকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলেছে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ও ১৯নং ওয়ার্ডের সংযোগস্থল খটখটিয়ার টাইগারপাড়া লালপুল ব্রিজ মোড় এলাকার অনেক বাড়িতে এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে নেসকো কোম্পানি।
এলাকাবাসী বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলে ঝুঁকির মধ্যেই চলাচল ও বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ও ১৯নং ওয়ার্ডের সংযোগস্থল খটখটিয়ার টাইগারপাড়া লালপুর ব্রিজ মোড় এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, এক কিলোমিটারের কিছু বেশি রাস্তাজুড়ে বসানো বাঁশের খুঁটিতে ভরসা করেই ৩০০ বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হয়েছে। মূল লাইনটি যেখানে গিয়ে শেষ, সেখানে ঝোলানো হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগের ১০টি মিটার। বাকি মিটারগুলো বসানো গ্রাহকদের বাড়িতে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন থেকে বিদ্যুৎ লাইন ওই এলাকার দক্ষিণে প্রায় ৫০০ গজ গিয়ে থেমে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুতের খুঁটির জন্য চেষ্টা করছিলেন তারা। কিন্তু খুঁটির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়ে কর্তৃপক্ষ বাঁশ বসিয়ে সংযোগ দিয়েছে। গত পাঁচ-ছয় বছর এভাবেই চলছে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১০০ গজের বেশি দূরত্বে সার্ভিস লাইন দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। ১০০ গজের অতিরিক্ত দূরত্ব হলে অবশ্যই খুঁটি দিতে হবে, অন্যথায় সংযোগ দেয়া যাবে না। অথচ এই এলাকায় এক কিলোমিটারের বেশি দূরে গিয়ে খুঁটি বসানো হয়েছে। মাঝের স্থানগুলোতে বসানো হয়েছে বাঁশের খুঁটি।
এছাড়াও এই এলাকায় ২০০ কেভি ট্রান্সফরমার দেয়া হয়েছে। যেখানে ১০০টি মিটার চলার কথা সেখানে ওই ২০০ কেভি ট্রান্সফরমার দিয়ে ৩০০টি মিটারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় প্রতিনিয়ত লোডশেডিং হয়ে থাকে। অনেক সময় লো-ভোল্টেজের কারণে অনেক বাড়ির ফ্রিজ, এসি, ইলেকট্রিকের দামি জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এলাকাটির ওই দুই ওয়ার্ডের ৫ শতাধিক পরিবারে বিদ্যুতের সংযোগের চাহিদা থাকলেও এভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় ঝুঁকির কথা বিবেচনায় অনেকেই সংযোগ নেননি। তাই ৩ শতাধিক বাড়িতে রয়েছে বিদ্যুতের সংযোগ। বছরের পর বছর বাকি পরিবারগুলো বিদ্যুতের সংযোগের জন্য বঞ্চিত হলেও খুঁটি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রামের কিছু বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে, কিছু বাড়িতে নেই, এটা ভাবাই যায় না। এলাকার সবাই বিদ্যুৎ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করতে বলেছে।
আশরাফুল ইসলাম, আবদুর রশিদ, আনিছুর রহমান, ফরহাদ হোসেন, আইয়ুব আলী নামের কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, এভাবে বিদ্যুৎ নেয়াটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ, তবু কিছু করার নেই। ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। আমরা চাই যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই এ সংযোগগুলোর নিরাপদ ব্যবস্থা হোক।
স্থানীয় সাইফুল ইসলাম, রমজান আলী, জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই এলাকায় ৩-৪ মাস পরপর বিদ্যুৎ বিল একসঙ্গে দেয়া হয়। এতে অনেক লোকের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিল লেখার জন্য অনেক সময় আসেন না। অফিসে বসে থেকে মনগড়া বিল তৈরির অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সোমবার জানতে চাইলে নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী-৩ আশরাফুল ইসলাম বলেন, সংযোগগুলো নানা সময় দেয়া হয়েছে। এলাকার মানুষের তদবিরে সংযোগগুলো দেয়া হয়ে থাকতে পারে। তবে ঝুঁকিমুক্ত করতে তারা ওই স্থানে দ্রুতই খুঁটি বসাবেন।