প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাহেদের ছবি পোস্ট, ছাত্রলীগ কর্মীকে মারপিট
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২০, ১১:৫৬ পিএম
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে থাকা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের একটি ঘনিষ্ঠ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন রাজশাহীর বাঘার এক ছাত্রলীগ কর্মী। এ জন্য তাকে বেদম পিটিয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বুধবার দুপুরে বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাবলুর দফতরে ছাত্রলীগ কর্মী শিমুল হোসেনকে (১৯) বেদম মারধর করা হয়। ঘটনার পর প্রায় অচেতন অবস্থায় ছাত্রলীগ শিমুলকে উদ্ধার করে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
শিমুলের বাবা সিরাজুল ইসলামের দাবি তার ছেলের আঘাত গুরুতর। তার জীবন নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
জানা গেছে, ছাত্রলীগ কর্মী শিমুল হোসেন বাঘা পৌরসভার বানিয়াপাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে ও গত বছর রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। গত ২৫ জুলাই শিমুল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে থাকা রিজেন্ট সাহেদের একটি ঘনিষ্ঠ ছবি এসকে শিমুল নামে নিজের ফেসবুকে আইডিতে পোস্ট করেন। সেখানে শিমুল লেখেন ‘এক সাহেদ কারাগারে, লক্ষ সাহেদ ধরাছোঁয়ার বাইরে।’ এরপর থেকেই বাঘা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিল শাহিনুর রহমান পিন্টু ও তার সহযোগীরা তাকে ফোনে গালাগালি ও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। এ কারণে সে গত দুদিন আত্মগোপনে ছিল।
এ দিকে জানা গেছে, ছাত্রলীগ কর্মী শিমুল পোস্টটি দেয়ার পর অব্যাহতভাবে হুমকি আসতে থাকায় এক ঘণ্টা পরই তা মুছে ফেলেন। এরপরও হুমকি চলছিল। অন্যদিকে নিজের বিপদ আঁচ করতে পেরে বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিষয়টি সমঝোতার জন্য শিমুল উপজেলা চেয়ারম্যান লাবলুর দফতরে যান ও ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এ দিকে খবর পেয়ে ওই সময় দলবল নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের দফতরে যান যুবলীগ নেতা পিন্টু ও তার সহযোগীরা। ছাত্রলীগ কর্মী শিমুলকে সামনে পেয়ে সেখানেই তাকে বাঁশ ও কাঠের লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করে পিন্টু ও তার লোকজন। মারতে মারতে তাকে নিচতলায় টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে সেখানেও বেদম মারধর করা হয়।
একপর্যায়ে রক্তাক্ত শিমুল অচেতন হয়ে পড়লে পিন্টু তার দলবল নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে লোকজন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ উদ্ধার করে শিমুলকে বাঘা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে।
বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. শিরিন শারমিন জানান, শিমুলের মাথায়, চোখে ও কপালে মোট ৬টি সেলাই দিতে হয়েছে। শরীরের সব জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। একটু সুস্থ হলে তাকে অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লাবলু বলেন, শিমুল ছাত্রলীগ কর্মী। সে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি সমঝোতার জন্য আমার দফতরে এসেছিল। সেখানে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে গেছে।
বাঘা থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে শিমুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখন সে কিছুটা সুস্থ।
ওসি জানান, এ ব্যাপারে তিনি এখনও লিখিত অভিযোগ পাননি। পেলে তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।