সিলেট
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে টিলার সম্মুখভাগের পর এবার কাটা পড়েছে গাছ। তবে গাছ কাটা নিয়ে লুকোচুরি শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। গাছ কাটাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খুব একটা বড়ভাবে না দেখলেও বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এদিকে গাছ কাটার বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, শাবির একাডেমিক ভবন ই-এর পাশে ১৩ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হচ্ছে সেন্টার অব এক্সিলেন্সের পাঁচতলা নতুন ভবন। ভবনটি নির্মাণের কাজ করছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেসার্স মোস্তফা কামাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
এ ভবনে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করতেই একাডেমিক ভবন ই-এর সামনে পুরনো একটি রেইনট্রি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। টিলার সম্মুখভাগ কাটা নিয়ে যখন সমালোচনা হচ্ছে ঠিক সেই সময়টাতেই গাছ কাটা হয়। তবে এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে- মূল রাস্তার মাঝে পড়ে যাওয়াতে উন্নয়নের স্বার্থে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গাছ কেটেছে; সেখানে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দাবি কোনো ধরনের গাছ তারা কাটেনি।
এদিকে গাছ কাটার বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। শিবলী সাদিক নামে একজন ফেসবুকে গাছের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন- ক্যাম্পাস খোলা থাকলে কারও সাধ্য হতো না এই গাছ কাটার। আতিক রনি নামের সাবেক এক শিক্ষার্থী লিখেছেন- উন্নয়নের নামে কংক্রিটের কারখানা বানাচ্ছে প্রশাসন। লোভের আগুনে পুড়ছে সব।
গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও গ্রিন ভয়েস নামক পরিবেশবাদী যুব সংগঠন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম গাছের ছবি ফেসবুকে দিয়ে লিখেছেন- ‘মনে হচ্ছে গাছগুলোকে মেরে ফেলে রাখা হয়েছে। শূন্য ক্যাম্পাসে সুযোগ পেয়ে হরিলুট হচ্ছে। মাটির ডিবি বলে টিলা কাটার পর এবার ভবন নির্মাণের নামে গাছ কাটা হচ্ছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আব্দুল করিম বলেন, দুই রাস্তার মাঝে পড়ে যাওয়ায় প্রশাসনকে জানানোর পর গাছটি কাটা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারবেন না।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সেন্টার অব এক্সিলেন্সের নির্মাণে ইনচার্জ হিসেবে রয়েছেন মাসুম মিয়া। তিনি যুগান্তরকে বলেন, কে বা কারা গাছ কেটেছে তা আমি কিছু জানি না। তবে আমরা কোনো ধরনের গাছ কাটি নাই। এছাড়া আমাদের কোম্পানি থেকে কোনো ধরনের গাছ কাটতে কাউকে কোনো নির্দেশনাও দেয়া হয়নি।
শাবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গাছ কাটার পর তিনি বিষয়টি জানতে পেরেছেন। গাছ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, কাজ বুঝে পাওয়ার পর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে কাজ করেন।
অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এভাবে সবকিছুতে ভুল ধরলে ভবন তৈরি করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। তারা আমাকে দেখিয়েছে, প্রস্তাবিত নকশায় মূল রাস্তার মাঝে গাছটি পড়েছিল। এছাড়া ভারি যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হওয়ার কারণেও গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের বড় কাজ করতে হলে দু-একটি ছোট ক্ষতি হবেই, যা আমাদের মেনে নিতে হবে।
এর আগে ছাত্রীদের আবাসিক ভবন তৈরির জন্য টিলার সম্মুখভাগ কাটার বিষয়টিও মাটির ডিবি বলে এড়িয়ে যায় প্রশাসন। এদিকে দুটি প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আগামী ২ বছরে ২৩টি ভবন নির্মাণের কথা রয়েছে।