সেতুর অভাবে দাগনভূঞায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার

মো. আবু তাহের, দাগনভূঞা (ফেনী) থেকে
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২০, ০৩:৫৩ পিএম

যুগ যুগ ধরে একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর পূর্ব ঘোনা গ্রামের মানুষ।
গ্রামটির তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে ছোট ফেনী নদী। অনেকটা দ্বীপের মতো রাজাপুর পূর্ব ঘোনা। এই গ্রামের স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীসহ হাজারও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন দড়ি টানা নৌকা দিয়ে পার হয়ে ফেনী সদরে যান।
নদী পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এই নদী পার হওয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। গ্রামবাসীর জন্য উপজেলা ও জেলা শহরে যাতায়াতের সহজ পথ হচ্ছে এটি। এই নদীর স্রোত বেশি হওয়ায় মাঝি দড়ি টেনে নৌকা বাইতে রাজি হয় না।
ফলে প্রায়শ ঝড়, বৃষ্টিতে এলাকাবাসীকে চরম কষ্ট পোহাতে হয়। এমনকি রাতে মাঝি না থাকায় নৌকা আরেক পাড়ে থাকে বলে পারাপারে ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রামবাসীকে। ফলে রাজাপুর বাজার হয়ে বিকল্প সড়ক দিয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার ঘুরে বাড়ি যেতে হয়। এটি গ্রামবাসীর জন্য চরম কষ্টকর ও ভোগান্তির।
এই গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন পাশের ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বিরলী হাইস্কুল ও প্রাইমারি স্কুলে যাতায়াত করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
এ ছাড়া প্রতিদিন কয়েক হাজার গ্রামবাসী স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ সারতে জেলা ও উপজেলা শহরে এই নদী পার হয়ে যাতায়াত করেন। প্রায়ই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে বলে এলাকাবাসী জানান।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা জাফর আহমদ বলেন, আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি, প্রায় সময় এখানে নৌকা ডুবে যায়। স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক। অনেক ছাত্রছাত্রী সাঁতার না জানায় লেখাপড়া বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে।
সোহেল নামে আরেক বাসিন্দা জানান, রাজাপুর উত্তর ও পূর্ব ঘোনার জন্য বিরলী স্কুল ও বিরলী বাজার কাছে হওয়ায় পথচারী এবং ছাত্রছাত্রীরা এ নৌকার ঘাটটি ব্যবহার করে থাকে। এ ছাড়া নৌকাঘাট ছাড়া বিকল্প পথে চলাচলের কথা জানতে চাইলে রাজাপুর বাজার হয়ে বিরলীর গাড়ি ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা।
অথচ নৌকার ঘাট দিয়ে কম সময়ে জনপ্রতি ৫ টাকা দিয়ে বিরলী যাওয়া যায়। যার কারণে পথচারী ও স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা এ নৌকাঘাটটি ব্যবহার করে থাকে।
এ বিষয়ে বিরলী স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কাজী আবিদুর রহমান জানান, সেতুর অভাবে এই গ্রামের মানুষের সারাবছর দুর্ভোগ পোহাতে হয়; বিশেষ করে স্কুলের কোমলমতি ছাত্রছাত্রী এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য নৌকা পার হওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বেশি থাকায় প্রায়ই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। অতিদ্রুত এখানে সেতু না হলে যে কোনো সময় প্রাণহানি ঘটতে পারে।
বিরলী স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম জানান, এই নৌকাঘাটের কোনো সরকারি নিলাম না থাকায় তিনি একটি নৌকা কিনে দেন ও মাঝি ঠিক করে দেন।
তাই গ্রামবাসী তাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে ছোট ফেনী নদীর ওপর দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ করতে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য জেনারেল মাসুদ উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

