খুলনায় কোরবানির পশু বিক্রির হার কমেছে, দুশ্চিন্তায় ৭ হাজার খামারী

খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২০, ০৯:৫৮ পিএম

খুলনায় গত বছর ৪৯ হাজার ৫শ'টি বিভিন্ন ধরনের গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে এ বছর বিকিকিনি বেশি হবে এই লক্ষ্য নিয়েই প্রস্তুতি শুরু করেছিল খামারীরা।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছে জেলার ৬ হাজার ৮৯০ জন খামারী। তাদের ব্যবসায়ের পুঁজি টিকিয়ে থাকা নিয়ে চলছে টানাটানি। এ দিকে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে চলতি বছর করোনার কারণে কোরবানিতে পশু বিকিকিনি কমার শঙ্কা রয়েছে শতকরা ২০ ভাগ।
এ দিকে খামারীদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়ার জন্য জেলার ৯টি উপজেলাসহ মেট্রোতে এ বছর ২৮টি পশুর হাট স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং পশুদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নের জন্য এ সব হাটে কাজ করবে ৩৭টি মেডিকেল টিম। এ ছাড়া খুলনায় প্রথমবারের মতো অনলাইন অ্যাপসের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিকিকিনির সুযোগ করা হয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, খুলনা জেলায় এ বছর কোরবানির পশু বিকিকিনির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫৪ হাজার।
গত ২০ জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী জেলার ৬ হাজার ৮৯০ জন খামারীর নিকট গবাদিপশুর সংখ্যা রয়েছে ৪৫ হাজার ১৮১টি। এ ছাড়া খুলনার পার্শ্ববর্তী জেলা এবং উপজেলা থেকে কোরবানির হাটে পশু আসাতে অত্র এলাকার চাহিদা মিটে যায়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর কোরবানি দিতে অনীহা বেড়েছে অনেকের। বিশেষ করে কোরবানির পশুর হাটে সামাজিক দূরত্ব নিয়ে শঙ্কা কাটছে না সাধারণ মানুষের। এ দিকে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের একটি অনুসন্ধানী টিম ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একটি জরিপ চালিয়েছে। জরিপের প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছর করোনাভাইরাসের কারণে শতকরা ২০ ভাগ পশু বিকিকিন কমে যাওয়ার শঙ্কা পেয়েছেন তারা। এতে করে খামারীদের বড় ধরনের ব্যবসায়ীক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোরবানির ব্যাপারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মারুফুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত কয়েক মাস আর্থিক সংকটে আছি। প্রতিষ্ঠান লোকসানে থাকার কারণে মালিকপক্ষ বেতন ঠিকমতো দিতে পারছে না। আমি প্রতিবছর চেষ্টা করি কোরবানির দেয়ার জন্য। কিন্তু এ বছর অবস্থা এতটাই খারাপ যে, কোরবানি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এইচ বি ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী বাচ্চু হাওলাদার জানান, এ বছর কোরবানির হাট থেকে পশু কেনার কোনো ইচ্ছা নেই। খুলনায় প্রতিনিয়ত যে হারে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে সে তুলনায় হাটগুলোতে সামাজিক দূরত্ব কতখানি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। তিনি বলেন, খামারীদের বাড়িতে গিয়ে বা অনলাইন অ্যাপসের মাধ্যমে পশু কেনার ইচ্ছা আছে।
নগরীর লবণচরার খামারী মো. আজহারুল ইসলাম সুমন বলেন, এ বছর কোরবানির পশুর দাম চাহিদা অনুযায়ী না পাওয়ার শঙ্কা বেশি। অনেকেই করোনার কারণে হাটে আসতে চাইবে না। এতে করে খামারীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এমনকি পুঁজি টিকে থাকা নিয়েও চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। আড়ংঘাটার সরডাঙ্গা এলাকার খামারী মো. রাজু আহমেদ বলেন, গরুর দাম এখনই কম যাচ্ছে। কোরবানিতে কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। মানুষ হাটে না আসলে গরুর দাম আশানুরূপ পাওয়া যাবে না।
খুলনার জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার এস এম আউয়াল হক যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এই বছর মানুষের মধ্যে আতংক থাকায় পশু বিকিকিনি কম হতে পারে। তাছাড়া আমরা উপজেলা পর্যায়ে একটি জরিপ চালিয়ে জেনেছি, চলতি বছর শতকরা ২০ ভাগ কোরবানির পশু বিকিকিনি কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে তিনি দাবি করেছেন, খামারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইতিমধ্যে ২৮টি স্থানে কোরবানির হাটসহ অনলাইনে পশু বিকিকিনির জন্য অ্যাপসের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছি।