নবীগঞ্জে জলমহাল নিয়ে বৃদ্ধ খুন, হামলায় আহত ৩০

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২০, ০৮:২৩ পিএম

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বিজনা নদীর জলমহাল নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা জাহির আলী (৭৫) নামে এক বৃদ্ধকে বর্শা দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে।
নবীগঞ্জ উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের বাশডর দেবপাড়া গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩০ জন জখম হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে ৫ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্য আহতদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। হামলাকারীরা অন্তত ২০টি বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে প্রায় ৮/১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধান করে।
হামলার ঘটনার খবর পেয়ে হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ নবীগঞ্জ-বাহুবলের সার্কেল এএসপি মো. পারভেজ আলম চৌধুরী, ওসি মো. আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার পর থেকে গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাউশা ইউনিয়নের বাশডর (দেবপাড়া) গ্রামে বিজনা নদীর জলমহাল নিয়ে ওই গ্রামের বর্তমান মেম্বার রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক মেম্বার মনর মিয়া গংয়ের সঙ্গে একই গ্রামের শফিক মিয়া, রয়মান মিয়া গংয়ের বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার হামলা ও মামলার ঘটনায় মামলা হয়।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে নবীগঞ্জ-বাহুবলের সার্কেল এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানায় ও তার কার্যালয়ে একাধিকবার বিষয়টি নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমকে নিয়ে বিরোধপূর্ণ বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়া হয়। কিন্তু বিষয়টি বর্তমান মেম্বার রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক মেম্বার মনর মিয়া গং সালিশের সময় রায় মানলেও এলাকায় এসে তা অমান্য করে অতিতের ন্যায় তারা তাদের আগের অবস্থানে ফিরে যান।
বুধবার সকালে কাচন বাড়ির সামনে দিয়ে সিএনজি স্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে শফিক মিয়ার পক্ষের লতিফ মিয়া ও তার স্ত্রীকে আটক করে মারধোর করে। এ খবর শফিক লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় এবং রাতেই দাঙ্গা হাঙ্গামা এড়াতে উভয়পক্ষের ৫ জনকে আটক থানার নিয়ে আসে।
এ দিকে বৃহস্পতিবার সকালে এরই ঘটনার জের ধরে বর্তমান মেম্বার রাজা মিয়া, কাচন মিয়া ও সাবেক মেম্বার মনর মিয়ার লোকজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শফিকের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। হামলাকারীদের বর্শার আঘাতে ঘটনাস্থলেই জাহির আলী নামে (৭৫) বৃদ্ধ মারা যান।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি আজিজুর রহমান জানান, গ্রামের জলমহাল, মসজিদসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিষয়টি নবীগঞ্জ-বাহুবল এর সার্কেল এএসপি পারভেজ আলম চৌধুরীর মধ্যস্থতায় নবীগঞ্জ থানায় ও তার কার্যালয়ে একাধিকবার বিষয়টি নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিমকে নিয়ে বিরোধপূর্ণ বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়া হয়। কিন্তু তার পরেও এ ঘটনা সংগঠিত হয়।
তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়ে রাতেই উভয়পক্ষের কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে আসি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।