Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘হ্যালো, আমি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে বলছি’

Icon

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২০, ০৯:০১ পিএম

‘হ্যালো, আমি ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে বলছি’

‘হ্যালো, আমি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলছি। তোমার নাম কি রুজি (ছদ্মনাম)? তুমি বড়লেখা নারীশিক্ষা কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী? তোমার বাবার নাম করিম মিয়া (ছদ্মনাম)? ওই শিক্ষার্থীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দেয়া ওই ব্যক্তি বলেন, ‘তোমার (রুজি উপবৃত্তির ১০ হাজার ২শ' টাকা আমার কাছে আছে। তুমি একটি বিকাশ নম্বর দাও। সেটিতে একটি পিন নম্বর যাবে। সেই পিন নম্বরটি তুমি আমাকে দিলে আমি টাকাটা পাঠিয়ে দেব।’

এভাবেই নিজেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে বিকাশ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল প্রতারকচক্রের এক সদস্য। 

ওই চক্রটি গত কয়েকদিনে মৌলভীবাজারের বড়লেখা নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে মোবাইলে উপবৃত্তির টাকা দেয়ার নামে উল্টো টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। 

এরই মধ্যে চক্রটি এক শিক্ষার্থীর ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর কারো কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিলেও তারা লজ্জায় প্রকাশ করছে না। এই অবস্থায় চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এতে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

প্রতারকচক্র এখনও ০১৮৮৯৪৬৮১৬৬ ও ০১৮৮৮৫৩৩৯৯২ নম্বর দুটি থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

এ দিকে প্রশ্ন উঠেছে, ওই প্রতারকচক্রটি কিভাবে শিক্ষার্থীদের নাম-পরিচয় ও ফোন নম্বর পেয়েছে। কারণ উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীরা রকেট বা বিকাশ (মোবাইল ব্যাংকিংয়ের) মাধ্যমে নিজেদের মোবাইলে পেয়ে থাকেন। আর শিক্ষার্থীরা রকেট বা বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলেছেন তাদের কলেজে। সে হিসাবে এ সব তথ্য একমাত্র কলেজ কর্তৃপক্ষ আর উপবৃত্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়া কারো জানার কথা নয়।   

কলেজ, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা নারীশিক্ষা একডেমি ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের ২ শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিবছর জনপ্রতি উপবৃত্তির টাকা হিসাবে ৪ হাজার ৯০০ টাকা পান। তারা এই টাকা রকেট বা বিকাশ (মোবাইল ব্যাংকিংয়ের) মাধ্যমে নিজেদের মোবাইলে পেয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তাদের আগে রকেট বা বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে নাম-পরিচয় ও মোবাইল নম্বর প্রদান করতে হয়। আর এ সব তথ্য একমাত্র তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আর উপবৃত্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। এ দিকে গত কয়েকদিন থেকে একটি প্রতারকচক্র ওই কলেজের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা দেয়ার কথা বলে তাদের মোবাইলে কল দিয়ে তাদের কাছে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। 

চক্রের সদস্যরা প্রথমে শিক্ষার্থীদের কল দিয়ে নাম-পরিচয় নিশ্চিত হয়। এরপর তাদের একটি বিকাশ নম্বর দিতে বলে। আর যাদের পারসোনাল (ব্যক্তিগত) বিকাশ নম্বর নেই তাদের কাছে নিকটস্থ কোনো বিকাশ এজেন্টের নম্বর চেয়ে থাকে। যারা বিকাশ নম্বর দেন তাদের মোবাইলে একটি পিন নম্বর আসে। 

যেই পিন নম্বর আসে আবার সেটি তাদের (প্রতারক) জানাতে বলে। যে সব শিক্ষার্থীরা সরল বিশ্বাসে ওই পিন নম্বরটি জানান। মূলত তাদের বিকাশে থাকা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। এর মধ্যে এক শিক্ষার্থীর ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই চক্রটি। অন্য শিক্ষার্থীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতারকচক্রের ফাঁদে আর পা দেননি।
  
এ কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুজি (ছদ্মনাম) শিক্ষার্থী  বৃহস্পতিবার বিকালে জানান, আমাকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি কল করেন। প্রথমে তিনি হুবুহু আমার নাম-পরিচয় বলেন। তিনি আমার পরিচয় যখন নিশ্চিত হন, তখন জানান তার কাছে আমার উপবৃত্তির ১০ হাজার ২০০ টাকা রয়েছে। একটি বিকাশ নম্বর দিলে তিনি তা পাঠিয়ে দেবেন। আমরা বিকাশ নম্বর দেয়ার পর সেটিতে একটি পিন নম্বর আসবে। সেটি দিলেই আমি টাকাটা পেয়ে যাব। পরে আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে আমার ভাইকে জানাই। পরে তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। পরে তারা (প্রতারক) আর যোগাযোগ করেনি।

প্রতারণার শিকার ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ওই শিক্ষার্থী বলেন, প্রতারকরা আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে আমি যদি তাদের ২৫ হাজার টাকা বিকাশে দেই তাহলে তারা আমাকে ৫০ হাজার টাকা দেবে। এটা উপবৃত্তির টাকা। তবে বিষয়টি যেন কাউকে না জানাই। পরে আমিও কাউকে এটা জানাইনি। বিশ্বাস করে তাদের দেয়া একটি নম্বরে ২৫ হাজার টাকা বিকাশ করেছি। এরপর দেখি তাদের সেই নম্বরটা বন্ধ। পরে তারা আর যোগাযোগ করেনি। 

নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক হাসান আহমদ জানান, একটি প্রতারকচক্র শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়ার কথা বলে উল্টো বিকাশ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা বিষয়টি ফোনে জানাচ্ছে। এ পর্যন্ত অর্ধশত শিক্ষার্থীকে তারা ফোন করেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের সতর্ক করছি। ইতিমধ্যে এক শিক্ষার্থীর ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। ওই শিক্ষার্থীকে থানায় অভিযোগ দিতে বলেছি।

থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক জানান, এ বিষয়ে কেউ এখনও কোনো অভিযোগ করেনি। তবে কেউ যদি অভিযোগ করেন তবে আমরা বিষয়টির তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম