বাগাতিপাড়ায় ক্ষেতেই পাকা গম পুড়িয়ে ফেলছেন কৃষকরা!
বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২০, ০৯:২১ এএম
বাগাতিপাড়ায় ক্ষেতেই পাকা গম পুড়িয়ে ফেলছেন কৃষকরা
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ফলন ভালো না হওয়ায় পাকা গম ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, সরু দানা হওয়ায় এ বছর গমের ফলন ভালো হয়নি। এতে কাটার শ্রমিকের মজুরি খরচই উঠছে না। ফলে তারা গম না কেটে ক্ষেতেই আগুনে পুড়িয়ে দিচ্ছেন।
তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবি, এ বছর গমের ফলন ভালো হয়েছে। মওসুমের শেষে দেরিতে বপনকারীদের গমের ফলন খারাপ হয়ে থাকতে পারে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েকদিন আগে মাঠজুড়ে গম চাষ দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলেও হঠাৎ অজানা কারণে গমে দানা না হওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে গম চাষীদের। বিঘা প্রতি উৎপাদিত গম মাড়াইয়ের পর বিক্রি করে কাটার শ্রমিকের মজুরির মূল্যই উঠছে না। ফলে পাকা গম না কেটে পুড়িয়ে ফেলতে তারা বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের সাইলকোনা এলাকার বেশকিছু কৃষক তাদের গম ক্ষেতেই পুড়িয়ে ফেলেছেন।
জানা গেছে, চলতি মওসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠে মাঠে জমি চাষ করে সার ও গম বীজ বপন করেছিলেন কৃষকরা। নিয়মিত সার ও সেচ পরিচর্যায় সবুজে সবুজে ভরে উঠেছিল পুরো মাঠ। সেই সঙ্গে রঙিন হয়ে উঠেছিল প্রান্তিক কৃষকদের স্বপ্ন।
কিন্তু গম যখন শীষ নিয়ে দাঁড়িয়েছে ঠিক তখনই অজানা এক সমস্যায় যেন কৃষকদের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে। একবুক আশা নিয়ে যত্ন আর পরিচর্যা করেছেন যে কৃষক, তারাই এখন নিজের হাতে ক্ষেতেই সেই পাকা গম পুড়িয়ে ফেলছেন।
উপজেলার সাইলকোনা গ্রামের আবুল কালাম, আলমগীর হোসেন, আলাউদ্দিন, সেলিম রেজা, জালাল উদ্দিন এবং ভাটুপাড়া গ্রামের ছাকাত আলী তাদের জমিতে থাকা পাকা গম গাছ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
সাইলকোনা গ্রামের নজরুল ইসলাম, আবদুল লতিফ, বাজিতপুর গ্রামের হাবিবুল্লা, আফাজ উদ্দিন, বিরাজ মোল্লা, কাঁকফো গ্রামের আবুল কালাম, আবদুল লতিফ, কোয়ালিগাড়া গ্রামের রুহুল আলী, সাদেক আলী, রুবেল আলী, ক্ষিদ্রমালঞ্চি গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন, আ. ছাত্তার, তকিনগর গ্রামের নিজাম উদ্দিন, মাফেজ উদ্দিন, আতাহার আলী, আস্তিকপাড়া গ্রামের সালামসহ বেশকিছু কৃষক যুগান্তরকে জানান, এ বছর শুরুতে তেমন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটায় গমের কাঁচা গাছে মাঠ ভরে উঠেছিল। কিন্তু শীষ নিয়ে দাঁড়ানোর সময় কৃষকরা লক্ষ্য করেন গম গাছের মাজা ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে।
তারা বলেন, সে সময় দোকানী ও বিভিন্ন কোম্পানির লোকজনের পরামর্শে এই রোগ থেকে প্রতিকার পেতে কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কাজে আসেনি। ফলে ওই সব জমিতে বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে দেড় থেকে তিন মণ। দানা খারাপ হওয়ায় যার বর্তমান বাজার মূল্য ১৫শ' টাকা থেকে দুই হাজার টাকা।
এ দিকে গম কাটা ও মাড়াই খরচ দুই হাজার টাকা। আর গমের বীজ বপন থেকে কাটার পূর্ব পর্যন্ত বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। এতে বিঘা প্রতি জমিতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
সাইলকোনা ছাড়াও উপজেলার জিগরী, বিলগোপালহাটি, যোগিপাড়া, মহজমপুর, শ্রীরামপুর, ডাকরমারিয়া, তমালতলা, জামনগর, ফাগুয়াড়দিয়াড়, মাধোববাড়িয়া, কালিকাপুর, রহিমানপুর ও দেবনগর গ্রামসহ বেশকিছু গ্রামের কৃষকরা একই সমস্যা পড়েছেন বলে জানা গেছে।
সাইলকোনা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। এই বছর এক বিঘা জমিতে গম বীজ বপন করেছিলাম। বপন থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু গমের দানা না হওয়ায় জমিতেই পুড়িয়ে ফেলেছি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে কাজ বন্ধ থাকায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে কীভাবে চলব তা ভেবে পাচ্ছি না।
তবে আগাম গম বীজ বপনকারী চাষীদের ফলন কিছুটা ভালো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাগাতিপাড়ায় গমের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি ৯ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। তবে যে সব চাষী নির্দিষ্ট সময়ের থেকেও অনেক দেরিতে বীজ বপন করেছেন তাদের গমের ফলন ভালো হয়নি। প্রতিটি ফসলের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকে সেই সময়ের পরে চাষ করলে সেই ফসল হয় না।