মাদক মামলায় ৯ আসামির বই পড়া ও সিনেমা দেখার সাজা
মাগুরা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২০, ০৩:১৯ এএম
মাগুরা জেলা জজ আদালত। ছবি: যুগান্তর
মাদকের একটি মামলার রায়ে ৯ যুবককে বই পড়া, গাছ লাগানোসহ সদাচরণে সহায়ক আরও একটি ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছেন আদালত।
সোমবার মাগুরার বিচারিক প্রথম আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা পারভেজ এ রায় দেন।
ব্যতিক্রমী ওই রায়প্রাপ্তরা হলেন- মাগুরা শহরের নতুনবাজার এলাকার অমি, অনিক সরকার, সৌরভ ঘোষ এবং সদর উপজেলার আঠারখাদা গ্রামের মিলন, সোহেল, উজির বিশ্বাস, তুহিন, রাশেদ ও সুজন বিশ্বাস। এদের প্রত্যেকের বয়স ২০ বছরের মধ্যে।
দণ্ডকালীন তারা প্রত্যেকে অন্যান্য কিছু শর্ত মেনে চলার পাশাপাশি আনিসুল হকের মা, জাফর ইকবালের আমার বন্ধু রাশেদ, জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি, একাত্তরের যিশু পড়বে মুক্তিযুদ্ধের এ চারটি বই পড়বেন, দুটি সিনেমা হাঙ্গর নদী গ্রেনেড, ওরা ১১ জন দেখবেন এবং দুটি বনোজ, তিনটি ফলদ গাছ লাগাবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোন্তাছের বিল্লাহ টুটুল জানান, ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর মাগুরা পৌর এলাকার বাটিকাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাঁশবাগান এলাকা থেকে ৩২ গ্রাম গাঁজাসহ ওই ৯ জনকে আটক করে পুলিশ।
মাগুরা সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক শহিদুজ্জামান তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করেন। মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণাদির ভিত্তিতে বিজ্ঞবিচারক মোস্তফা পারভেজ তিন মাসের কারাদণ্ডের পরিবর্তে ওই ৯ জনকে ব্যক্তিজীবনের সংশোধনের জন্য বিভিন্ন শর্তসংবলিত মুচলেকা সাপেক্ষে ১৯৬০ সালের প্রবেশন আইনের ৫ ধারায় একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্বাবধানে প্রবেশনে মুক্তি দেয়ার এ আদেশ দেন।
তিন মাসের কারাদণ্ডের পরিবর্তে ছয় মাসের প্রবেশনকালীন আসামিরা প্রবেশন কর্মকর্তার তত্বাবধানে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। প্রবেশনের শর্ত অনুযায়ী, আসামিরা তাদের বাসস্থান ও জীবন ধারণ সম্পর্কে প্রবেশনাল কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন।
তারা সৎ ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করবেন। কোনোরূপ মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন, বহন কিংবা হেফাজতে রাখবেন না। পাশাপাশি তারা প্রত্যেকে মুক্তিযুদ্ধের উল্লিখিত চারটি বই, দুটি সিনেমা পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে পাঁচটি গাছ লাগাবেন।
আদালত তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন। সবার সঙ্গে সবসময় সদাচরণ করবেন। প্রবেশন কর্মকর্তার আদেশ মেনে চলবেন। কোনোরূপ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না বা একই ধরনের অপরাধ আর করবেন না। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করবেন। উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করবেন না।
আসামিরা এসব শর্ত মানার বিষয়ে প্রতি দুই মাস অন্তর আদালত কর্তৃক নিয়োজিত মাগুরা সমাজসেবার প্রবেশন কর্মকর্তা মেহতাজ আরার কাছে তাদের অগ্রগতি জানাবেন, যা প্রবেশনার কর্মকর্তা আদালতকে অবহিত করবেন। প্রবেশনার আসামিরা কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে বা তার আচরণ সন্তোষজনক না হলে তার প্রবেশন আদেশ বাতিল করা হবে এবং অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডাদেশ তিন মাসের কারাদণ্ড ভোগ করবেন।
এর আগে গত ২ মার্চ মাগুরার মুখ্য বিচারিক আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের ইব্রাহিম নামে এক যুবককে ছয় মাসের কারাদণ্ডভোগের পরিবর্তে প্রবেশন আইনে একই ধরনের কিছু শর্ত মেনে চলার মুচলেকা সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিলেন।