হামলার মামলায় আসামিকে এক বছর বই পড়া ও সিনেমা দেখার সাজা
মাগুরা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২০, ০৭:৩৫ পিএম
দণ্ডপ্রাপ্ত ইব্রাহিম। ছবি: যুগান্তর
মাগুরায় একটি হামলার মামলায় চাঞ্চল্যকর রায় দিয়েছেন আদালত। ইব্রাহিম হোসেন নামে অভিযুক্ত আসামিকে এক বছরের দণ্ড দেয়া হলেও তাকে কারা অভ্যন্তরে থাকতে হবে না।
কিন্তু এই সময়ের মধ্যে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের উপর সুনির্দিষ্ট দুটি বই পড়তে হবে। দেখতে হবে একটি সিনেমা। লাগাতে হবে ৫টি বৃক্ষ। পড়তে হবে ইসলাম এবং নৈতিকতার উপর আরও দুটি বই।
মঙ্গলবার বিকালে মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান চাঞ্চল্যকর এই রায়টি দিয়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে প্রবেশন অফিসার মেহেতাজ আরা সালমার হাতে তুলে দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হচ্ছে- মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত হান্নান মোল্যার ছেলে। সে মহম্মদপুর আদর্শ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ইব্রাহিমের মা চায়না বেগমের সঙ্গে চাচি সায়লা খাতুনের বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এ সময় ইব্রাহিম মায়ের পক্ষ নিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে চাচির উপর হামলা করে।
এ ঘটনার পর সায়লা খাতুন মহম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ ইব্রাহিম এবং তার মা চায়না বেগমকে আটক করে। ওই সময় তারা ৭ দিন হাজতবাস করে জামিনে মুক্তি পায়। কিন্তু ঘটনাটি পারিবারিকভাবে মীমাংসা না হওয়ায় মামলাটি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায় এবং ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউর রহমান সোমবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের দণ্ড দেন।
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার রায়ে উল্লেখ করেছেন যে, দণ্ডকালীন তাকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দুটি বই যথাক্রমে জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি এবং রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা একাত্তরে চিঠি পড়তে হবে। একটি সিনেমা দেখতে পারবে। সেটি অবশ্যই কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের আগুনের পরশমণি।
এ ছাড়াও ইসলাম ও নৈতিকতার ওপর দুটি বই পড়বে। পাশাপাশি ২টি বনজ এবং ৩টি ফলদ বৃক্ষ রোপণ করতে হবে তাকে। এ ছাড়াও দণ্ডকালীন তার কোনো অসৎ সঙ্গী থাকতে পারবে না। সেবন করতে পারবে না কোনো নেশাদ্রব্য।
এই রায়ের বিষয়ে মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি আমির আলি মানিক বলেন, আসামির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তবে অল্প বয়সী এই শিশুটির অপরাধকে ক্ষণিকের উত্তেজনায় কৃত অপরাধ হিসেবে গণ্য করে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এক বছরের দণ্ড দিয়েছেন।
এ সময়টি সে মাগুরার প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে থাকবে। নিয়মিত ৩ মাস অন্তর আদালতে হাজিরা দিতে হবে। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করলে তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
এদিকে রায়ের প্রতি মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুল মান্নানও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ছেলেটি নিজেকে সংশোধনের পাশাপাশি চরিত্র গঠনের সুযোগ পাবে। কিন্তু কারাগারে পাঠানো হলে সংশোধন হওয়ার পরিবর্তে অভ্যাসগত অপরাধীদের সঙ্গে মিশে পুরাদস্তুর অপরাধী হওয়ার আশঙ্কা থাকত।
এই মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবেশন অফিসার মেহেতাজ আরা সালমা বলেন, ছেলেটির বয়স অল্প। পড়াশোনা করছে। আশা করছি বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের আরোপিত সব শর্তই ছেলেটি পালন করবে। আমি নিজেও তাকে সেই সহায়তা দেব।