ময়মনসিংহে নিহত তিথি পেলো ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি!
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২০, ০৬:৫৮ এএম
তিথি পাল। ছবি: সংগৃহীত
শুনশান নীরবতা। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তির সংবাদেও নেই উল্লাস! নিঃশব্দে কাঁদছেন মা রীতা পাল। মাকে কি সান্ত্বনা দেবে তিথি পালের বোন রাত্রি পাল। তারপরও মায়ের মাথাটা কাঁধে নিয়ে দিচ্ছে ভরসা।
টেবিলে সুসজ্জিত বই, শখের ফুলদানিও আছে; শুধু চেয়ারে নেই তিথি! সোমবার দুপুরে এমন দৃশ্য দেখা গেল তিথি পালের মধ্যবাজার চাল মহালের বাসায়।
এ দিকে তিথির সঙ্গে আহত রূপা চক্রবর্তী এখনও বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারেনি। দু’পা ভেঙ্গে শয্যাশায়ী; সেখানেই চলে খাওয়া-দাওয়া আর প্রকৃতির সব কাজ। সোজা হয়ে বসতেও পারে না। তিথি পালের কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়ছে বান্ধবী রূপা চক্রবর্তী। চিকিৎসা খরচও ঠিকমতো জুটছে না রূপা চক্রবর্তীর।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেঁজুতি ধরের দেয়া সামান্য আর্থিক সাহায্য আর প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় চলছে ওর জীবনযুদ্ধ।
সোমবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় আধশোয়া হয়ে বালিশের ওপর বই আর খাতা নিয়ে গণিত চর্চায় ব্যস্ত। বিছানায় আটকে আছে ক্ষুদে শিশু মনের জীবন আর নিত্যদিনের কর্ম।
গত ১৩ জানুয়ারি গৌরীপুর পৌর শহরের মধ্যবাজারে কোচিংয়ে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় তিথি পাল। আহত হয় তার বান্ধবী রূপা চক্রবর্তী। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে গৌরীপুর উপজেলা সদরে টানা ১০ দিন মানববন্ধন-বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠে।
দু'জনেই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পায়। সদ্য প্রকাশিত ফলাফলে তিথি পাল ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম মাজহারুল আনোয়ার ফেরদৌস জানান, পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিথি পালসহ এ বিদ্যালয়ে ট্যালেন্টপুলে ১৫ জন ও সাধারণ গ্রেডে ৩ জন ছাত্র-ছাত্রী বৃত্তি পেয়েছে। অপরদিকে এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ট্রাকচালক হুমায়ুন কবীর ও ট্রাকের হেলপার জামিনে মুক্তি পেয়েছে।
তিথি পালের মা রীতা পাল সোমবার যুগান্তরকে বলেন, চালক আর মালিকপক্ষের কেউ এল না, আমাদের একবার খবর নিতে, অথচ সবাই ছাড়া পেল। আমি তো ছাড় পাইনি! এখনও তিথি আমার আঁচলে টেনে ধরে, এপাশ-ওপাশ দৌড়ে- আমার তিথি; আমিতো ৪৯ দিনের মাঝে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারিনি। সন্তানের বিচার নিয়ে শঙ্কিত তিনিসহ তিথি পালের বাবা রঞ্জন কুমার পালও।
তিনি জানান, আমার মেয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে, তিথি নেই; কোনো আবদার আজ নেই। আমাদের আবদার ছিল- দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। কিন্তু চালক ও হেলপার জামিনে মুক্তি পেয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের আদৌ বিচার হবে কি?
এ দিকে মামলার তদন্তকারী অফিসার মো. বাহারুল ইসলাম জানান, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে মালিকের জিম্মায় ট্রাক হস্তান্তর করা হয়েছে। আদালত ট্রাকের চালক ও হেলপারের জামিন দিয়েছেন। আমরা ডাক্তারি রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। তদন্ত কাজ সমাপ্তির পথে। রিপোর্ট পেলেই চার্জশিট প্রদান করা হবে।