টাঙ্গাইলে রিমান্ড শেষে সেই শরিয়ত বয়াতি কারাগারে

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২০, ১০:১৩ পিএম

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গ্রেফতারকৃত বাউল শরিয়ত বয়াতিকে তিনদিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার দুপুরে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মামলায় শরিয়তের বিরুদ্ধে যে কথাগুলো বলার অভিযোগ আনা হয়েছে তা তিনি বলেছেন বলে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
এ দিকে শরিয়ত কারাগারে গেলেও গ্রামে তার পরিবারের লোকজন রয়েছে নিরাপত্তাহীনতায়। ছোট তিন সন্তানের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় কিছু লোকজন তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শরীয়তে স্ত্রী, ভাই ও বোনেরা।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আগধল্লা গ্রামের বাউল শরিয়ত বয়াতি (৩৫) গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার একটি বাউল গানের আসরে যান। সেখানে পালা গানে বলেন, ‘গান বাজনা হারাম কোরআনে কোথাও এ কথা বলা নেই। কেউ যদি হারাম প্রমাণ দিতে পারেন তবে তাকে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার চ্যালেঞ্জ করেন।’
এ ছাড়াও ইসলাম ও কোরআন হাদিস নিয়ে কিছু কথা বলেন। ইউটিউবে তার এই বক্তব্য তার নিজ গ্রামের কিছু মানুষ দেখেন। তারা এলাকায় শরিয়ত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে বলে অভিযোগ আনেন। শরিয়তের বিচারের দাবিতে এলাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন।
গত ৯ জানুয়ারি আগধল্লা গ্রামের মাওলানা মো. ফরিদুল ইসলাম বাদী হয়ে শরিয়তের বিরুদ্ধে মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ধায়েরকৃত মামলায় শরিয়তের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাতের অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়।
গত শনিবার পুলিশ শরিয়তকে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গ্রেফতার করে। ওই দিনই তাকে টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাপুর থানার এসআই মুহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, মামলায় বাদী শরিয়তের বিরুদ্ধে যে কথাগুলো বলার অভিযোগ এনেছেন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে শরিয়ত তা বলেছেন বলে স্বীকার করেছেন। তবে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোসহ সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর উদ্দেশ্যে এ সব বক্তব্য দিয়েছেন কিনা সে বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
মঙ্গলবার রিমান্ড শেষে শরিয়তকে টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানো আদেশ দেন।
শরিয়তের আইনজীবী জিনিয়া বক্স জানান, তারা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শরিয়তের জামিনের আবেদন করেছেন।
শরিয়তকে আদালতে হাজির করা হবে এ খবর পেয়ে শতাধিক বাউল এবং শরিয়তের আত্মীয়স্বজন আদালত এলাকায় ভিড় করেন।
শরিয়তের ভাই মারফত আলী জানান, প্রতিবছর তাদের বাড়িতে বাউল গানের আসর হয়। এ গান বন্ধ করার জন্য এ মামলার বাদী মাওলানা ফরিদুল ইসলাম এলাকার কিছু মানুষ সঙ্গে নিয়ে কয়েক বছর যাবৎ হুমকি দিচ্ছে। তারা চাঁদাও চেয়েছিল।
শরিয়তের স্ত্রী শিরিন বেগম জানান, তারা সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যে চক্রটি শরিয়তের বিরুদ্ধে নানা অপ্রচার ও মামলা করেছে তারা তাদের (শিরিনদের) হুমকি দিচ্ছে। তার ছেলে সাদিকুল ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট দুই মেয়ে পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। হুমকির মুখে ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতেও পারছে না।