ফতুল্লায় প্রতি ইজিবাইকে ২২ হাজার টাকা চাঁদা
চালকদের কাছে চাঁদাবাজদের টোকেন বিক্রির হিড়িক

আলামিন প্রধান, ফতুল্লা থেকে
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ০১:৫৭ পিএম

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় প্রতিটি ইজিবাইক ও অটোরিকশা থেকে ২২ হাজার টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা।
চাঁদা নেয়ার পর চালকদের টোকেন দেয়া হচ্ছে। তাই এলাকায় এখান চাঁদাবাজদের এ টোকেন বিক্রির হিড়িক পড়েছে।
টোকেনের জন্য ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা চালক ও মালিকরা চাঁদাবাজদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
কেউ পাচ্ছেতো কেউ পাচ্ছেনা। এসব টোকেন একটি ইজিবাইকের জন্য ২২ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ফের প্রতিমাসে সন্ত্রাসীদের টোকেন ভাড়া দিচ্ছে ৮০০ টাকা করে।
আর এসব টোকেন ফতুল্লার দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ আজিজুল তার শতাধিক লোকজন দিয়ে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ইজিবাইক চালক ও মালিকদের অভিযোগ, আজিজুল সব সময় প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গেই ঘুরে বেড়ায়। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত শতাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়া দ্রুত বিচার আইনে চাঁদাবাজির মামলা হওয়ার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ আজিজুলকে ছুতেও পারেনি। তার টোকেন গাড়িতে ব্যবহার করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ সে ইজিবাইক আটক করেনা। তাই তার বিক্রি করা টোকেনকে ইজিবাইক চালক ও মালিকরা গুরুত্ব দিয়ে কিনেন।
ইজিবাইক চালক মোতালেব মিয়া জানান, প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর ধরেই আজিজুল ইজিবাইকে চাঁদাবাজী করে আসছেন।
প্রতিটি এলাকায় তার লোকজনকে দায়ীত্ব দেয়া হয়েছে গ্যারেজে গিয়ে মালিক-মাহজনদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করার।
সে অনুয়ায়ী চাঁদা আদায় হয়। কয়েক বছর আগে ইজিবাইকের জন্য টোকেন বিক্রি হতো ৬ হাজার টাকায়। এখন সেই টোকেনের মূল্য বাড়িয়ে ২২ হাজার টাকা করা হয়েছে আর আগের টোকেন বাতিল ঘোষনা করেছে।
এরমধ্যে আগে দৈনিক প্রতিটি ইজিবাইক চালকদের কাছ থেকে লাইন খরচ অর্থাৎ যানজট নিরসন কর্মীদের নামে প্রকাশ্যে ৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হতো।
এখন র্যাবের তৎপরতায় তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু র্যাব জেলার বিভিন্ন এলাকার পরিবহন চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করলেও আজিজুলের বিষয় কোন হস্তক্ষেপ করেন না বলে অভিযোগ করেন অটো চালকরা।
ইজিবাইক মালিক মাহবুব মিয়া জানান, ইজিবাইক যে সড়কেই চালাবো সে সড়কের নাম বলে টোকেন কিনতে হয়।
আমি শিবুমার্কেট থেকে পোষ্টঅফিস রোডের জন্য দুইটি গাড়ির টোকেন কিনতে কয়েকদিন ধরে ঘুরছি।
শিবু মার্কেট সড়কের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ টোকেন বিক্রি হয়েছে। আরও ২০ থেকে ৩০টি টোকেন বিক্রি করবে।
এছাড়া ফতুল্লার প্রতিটি সড়কেই যে সব ইজিবাইক চলে তাদের প্রত্যেককেই টোকেন দিয়েছে আজিজুল ছাড়াও আরো কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ।
ফতুল্লার পাগলা, কাশিপুর, বাংলাবাজার, মুসলিমসগর, ধর্মগঞ্জ, তল্লা, হাজীগঞ্জ, সাইনবোর্ড, দেলপাড়া, তক্কারমাঠ-নন্দলালপুর এলাকায় অন্তত ৫ হাজার ইজিবাইক রয়েছে।
এসবের মধ্যে ফতুল্লার পাগলা, শিবু মার্কেট ও তক্কারমাঠ এলাকায় চলাচল করা অন্তত ২ হাজার ইজিবাইক থেকে আজিজুল চাঁদাবাজী করে।
ইজিবাইক মালিক মেহেদী হাসান জানান, টোকেন বিক্রেতা আজিজুলের প্রতিনিধি মধ্য সস্তাপুর এলাকার ওয়াসিম মিয়ার কাছে অন্তত বিশবার গিয়েছি।
টাকা কম বলায় আমাকে টোকেন দিচ্ছে না। আবার টোকেন ছাড়া আমার ইজিবাইক সড়কে চলতেও দিবে না।
পুলিশে অভিযোগ করলে উল্টো নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাই ধর্য্য ধরেই টোকেন নিতে হবে।
ফতুল্লা মডেল থানার সাবেক ওসি শাহ্ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ আজিজুলকে গ্রেফতারে একাধীকবার চেষ্টা করেও ধরতে পারিনি।
পরে তার ৬ সহযোগীকে চাঁদার টাকাসহ পঞ্চবটি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে আজিজুলসহ ১১ চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছিলেন। সে মামলায় আদালতে আজিজুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, আজিজুলকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। প্রতিটি এলাকায় যারা আজিজুলের পক্ষে চাঁদাবাজি করে তাদেরও খোঁজ খবর নিয়ে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।