‘তোকে কিনেছি, যা ইচ্ছা তাই করব’ বলেই প্রতিরাতে সুমির ওপর চলত নির্যাতন

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ১১:৫৯ এএম

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার নারী শ্রমিক সুমি আক্তার গতকাল শুক্রবার দেশে ফিরেছেন।
দেশে ফিরেই সন্ধ্যায় নিজ জেলা পঞ্চগড়ে ফিরে গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন সুমি। তুলে ধরেন নির্মম নির্যাতনের কথা।
ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে সুমি বলেন, ‘প্রতি রাতেই শরীরের ওপর চলত নির্যাতন। প্রতিবাদ করলেই মারধর। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়তাম। কিন্তু তাতে তারা থেমে যেত না। ওই অবস্থায়ই শরীরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত।
জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পারতাম সেটা। আমি প্রথমে যেই বাসায় ছিলাম, সেই বাসার মালিক চালাত এমন নির্যাতন।
একপর্যায়ে ওই মালিক আমাকে বিক্রি করে দেয় আরেক বাসায়। ওই বাসায় গিয়ে পড়ি আরেক বিপদে। সেখানেও শারীরিক নির্যাতন।
নতুন মালিক বলল, বাংলাদেশি প্রায় ৪ লাখ টাকায় আমাকে কিনেছে সে। আত্মরক্ষায় প্রতিবাদ করলে নতুন মালিক বলে, “তোকে কিনে এনেছি। তোর সঙ্গে যা ইচ্ছা তা-ই করব।” এভাবে প্রতি রাতে আমার ওপর চলত নির্যাতন।’
সুমি জানান, সৌদিতে তাকে একটি রুমে আটকে রেখে দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে। সৌদিতে নির্যাতিত হয়ে আমি ভেবেছিলাম আর কোনদিনে দেশে ফিরতে পারব না। সেখানে যাওয়ার পর প্রথম কর্মস্থলে মালিক তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতেন, মারধর করতেন, হাতের তালুতে গরম তেল ঢেলে দিতেন এবং কক্ষে আটকে রাখতেন।
সুমি আরও জানান, এক পর্যায়ে সুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই মালিক তাকে না জানিয়ে সৌদি আরবের ইয়ামেন সীমান্ত এলাকায় নাজরানের এক ব্যক্তির কাছে প্রায় ২২ হাজার রিয়ালে বিক্রি করে দেন। ওই মালিকও তাকে নির্যাতন করেন।
উদ্ধার হওয়ার আগে ১৫ দিন তাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল। ঠিকমতো খাবার দেয়া হয়নি। একসময় খুব কান্নাকাটি করে স্বামীর সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য ফোনটি চেয়ে নেন সুমি।
তারা ফোন ফিরিয়ে দিলে বাথরুমে গিয়ে একটি ভিডিও ধারণ করেন সুমি। সেই ভিডিওতে নিজেকে নির্যাতনের কথা জানিয়ে তার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেন তিনি। পরে ওই ভিডিওটি তার স্বামী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন এবং বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করেন।
পরে অনলাইনে ভিডিওটি ভাইরাল হলে বিষয়টি সরকারের নজরে আসে। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় দেশে ফিরতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।