
প্রিন্ট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম
ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুই যশোরের কলেজছাত্র পল্লবের ঘাতক!

যশোর ব্যুরো
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০১৯, ১২:০১ এএম

পল্লব দত্ত। ফাইল ছবি
আরও পড়ুন
পল্লব, মারুফ ও আলিফ ঘনিষ্ঠ তিন বন্ধু। একে অপরের হাড়ির খবর জানতো। আলিফের প্রেমের কাহিনী ফাঁস আর মারুফের প্রেমিকার সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার ভিডিও ধারণ করেছিল।
এতে দুই বন্ধু ক্ষুব্ধ হয়ে পল্লবকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরপর তাকে ডেকে নিয়ে গলাকেটে হত্যার পর লাশ ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে।
নিখোঁজের ২৬ দিন পর পল্লবের ল্যাপটপ পাওয়া যায় ওই বন্ধুদের কাছে। ল্যাপটপ কীভাবে গেল তাদের কাছে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে পল্লব দত্ত (১৭) হত্যার রহস্য উন্মোচন করে পুলিশ।
রোববার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে একই কথা বলেছেন আলিফ আহমেদ অপূর্ব।
অপর দুই আসামি মারুফ ওরফে ইশান ও আলিফের নানী সাদিয়া সুলতানা সাবিহার সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
আগামী বুধবার রিমান্ড শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সঞ্জিত কুমার মণ্ডল।
শনিবার রাতে যশোর সদর উপজেলার জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের একটি কাঁচা ঘরের মধ্যে থেকে পল্লব দত্তের (১৭) লাশ উদ্ধার করা হয়।
ওইদিন দুই বন্ধু সদর উপজেলার জঙ্গলবাঁধাল গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে আলিফ আহম্মেদ অপূর্ব ও জগন্নাথপুর গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে মারুফ ওরফে ইশানকে (১৯) আটক করা হয়। তারা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার পরিকল্পনা, হত্যা ও লাশ গুমের কথা স্বীকার করেছে।
বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই সঞ্জিত কুমার মণ্ডল জানান, গত ১৪ অক্টোবর নিখোঁজ হন কলেজছাত্র পল্লব দত্ত। তিনি যশোর সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় তার বাবা কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেছিলেন। জিডির বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ।
শনিবার সকালের দিকে পল্লবের দুই বন্ধু অপূর্ব এবং ঈশানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আলিফ স্বীকার করে, পল্লবকে হত্যা করে তার নানা আজিজার রহমান মাস্টারের জঙ্গলবাঁধালস্থ বাড়ির দক্ষিণ পাশের একটি কাঁচা ঘরের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে সেখানেই পুঁতে রাখা হয়েছে।
দুইজনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই ঘরের মধ্যে মাটি খুঁড়ে পল্লবের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অপূর্ব ও ঈশানকে আটক করা হয়। অপূর্বের নানী সাদিয়া সুলতানা সাবিহাকেও আটক করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে জবানবন্দিতে আলিফ ও মারুফ জানিয়েছে, তারা তিনজন খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। একটি মেয়ের সঙ্গে আলিফের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আর মারুফের আরেক মেয়ের সঙ্গে প্রেম ছিল। আলিফ তার নানা বাড়িতে থাকতো। নানা বাড়ির দক্ষিণ পাশের একটি ঘরে সে থাকতো। ওই ঘরে প্রেমিকাকে নিয়ে অন্তরঙ্গ সময় পার করে মারুফ। সেই দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে পল্লব।
অপরদিকে আলিফের প্রেমের সম্পর্কের কথা ফাঁস করে দেয় পল্লব। এ জন্য প্রাইভেট শিক্ষক আলিফকে ব্যাচ থেকে বাদ দিয়ে দেয়। পরিবারের লোকজনও বকাঝকা করে। এতে দুই বন্ধুই ক্ষুব্ধ হয়।
আলিফ আর মারুফ হত্যার পরিকল্পনা করে ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে আলিফের নানা বাড়ির ওই ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে দুই বন্ধু মিলে পল্লবকে গলা কেটে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে ঘরের মধ্যে ড্রেসিং টেবিলের নিচে পুঁতে রাখে।
নিখোঁজের ২৬ দিন পর ৯ নভেম্বর পুলিশ আলিফের কাছে পল্লবের ল্যাপটপ পায়। কীভাবে পল্লবের ল্যাপটপ তার কাছে গেল। এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসে।