মাধবপুর হাসপাতালে ৪ মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ
রোকন উদ্দিন লষ্কর, মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০১৯, ০৪:১৩ পিএম
৫০ শয্যা বিশিষ্ট মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি: যুগান্তর
মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে গত ৪ মাস যাবৎ হাসপাতালে সরকারি ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে করে গ্রামাঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক রোগী সরকারি ওষুধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে প্যারাসিটামল মেট্রোনিডাজল ও কলেরা স্যালাইন পর্যন্ত সরবরাহও নেই।
গত ৩১ অক্টোবর উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ওষুধ সংকটের বিষয়টি উপস্থাপন করলে উপজেলা থেকে ৩ নভেম্বর ১৬ হাজার ৫শ প্যারাসিটামল, ১৪৪টি ৫০০ এম এলক কলেরা স্যালাইন ও ১৪৪টি ১০০০ এম এল কলেরা স্যালাইন সরবরাহ করা হয়। এগুলো এখন শেষ পর্যায়ে।
এদিকে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ও ভাটি অঞ্চলে পানি নেমে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ডায়রিয়া রোগ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই ডায়রিয়া চিকিৎসা নিতে এ হাসপাতালে রোগীর ভিড় দেখা দিয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে রোগীদেরকে ওষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালে ওষুধের স্টোরটি বর্তমানে ওষুধ শূন্য। কবে নাগাদ ওষুধ সরবরাহ করা হবে তা এখনো অনিশ্চিত।
ওষুধ অধিদফতর কর্তৃক জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে ওষুধ সরবরাহ হবে এ সিদ্ধান্তহীনতার কারণে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৪ মাস যাবত ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যে কারণে প্যারাসিটামল, কলেরা সেলাইনসহ জীবন রক্ষাকারি ওষুধ একেবারেই নেই।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায় রোগীদের ভোগান্তির নানা চিত্র।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক জানান, হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লেখা যাবে না। কারণ ওষুধ নেই। এ জন্য ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখে বাহির থেকে সরবরাহের পরামর্শ দিচ্ছেন।
গোয়ালনগর গ্রামের একজন জানান, তিনি ডাক্তার দেখিয়েছেন কিন্তু তার যে সমস্যা সেই রোগের ওষুধ হাসপাতালে নেই।
গ্রামের এক গরিব রোগী জানান, এতদূর থেকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। কিন্তু সরকারি ওষুধ না পেয়ে আমি হতাশ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এইচএম ইশতিয়াক মামুন যুগান্তরকে বলেন, প্রতিদিন এ হাসপাতালে আউটডোর ও ইনডোরে ৬ থেকে ৭ শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু লাস্ট কোয়াটার (তিন মাস) যাবত হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহ নেই। এতে করে স্টক শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় রোগীদের কে সরকারি ওষুধ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি জানান, মাধবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওষুধ সংকটের বিষয়টি নিরসনের জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিভাগীয় ডিরেক্টর ও সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের এখানে জুলাইয়ের পর কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হয়নি। এর কারণে মূলত ওষুধের এ সংকটটি তৈরি হয়েছে। এটা শুধু হবিগঞ্জেই নয়, সারা দেশের একই অবস্থা। ওষুধ অধিদপ্তর কর্তৃক জেলা না উপজেলা পর্যায়ে ওষুধ সরবরাহ হবে নাকি সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা হবে এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে।