শ্রুতি লেখক নিয়ে জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে রিয়াদ!
মো. মঞ্জুরুল আলম মাসুম, বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০১৯, ১০:২১ এএম
শ্রুতি লেখক নিয়ে জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সাইমুন ইসলাম রিয়াদ
সাইমুন ইসলাম রিয়াদ। শারীরিক প্রতিবন্ধী। দৃষ্টিশক্তিও ক্ষীণ। কিন্তু পড়ালেখা করে সমাজের মূল স্রোতধারার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চায়।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপণী পরীক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে এবার জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তবে নিজে লিখতে না পারায় নিয়েছে শ্রুতি লেখক। স্বপ্ন তার প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়া।
অদম্য সাইমুন ইসলাম রিয়াদের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা গ্রামে। চলতি বছর বাগাতিপাড়া বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রের ডিগ্রি কলেজ ভেন্যুতে ১০নং কক্ষে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে রিয়াদ।
পরীক্ষা কেন্দ্রে কথা হয় রিয়াদ ও তার বাবা-মায়ের সঙ্গে।
শিক্ষার্থী রিয়াদ জানায়, সে পাকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর আগেও শ্রেণি পরীক্ষায়ও একইভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। এবার তার নিকট আত্মীয় সালাইনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রিয়াদুস সলেহিন রিয়াদ তাকে লিখে দিচ্ছে।
রিয়াদুস সলেহিন রিয়াদ জানায়, পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থী রিয়াদ তাকে মুখে যা বলে সেগুলোই পরীক্ষার খাতায় সে লিখে দেয়।
রিয়াদের বাবা আকরাম হোসেন জানান, তার তিন সন্তানের মধ্যে বড় রিয়াদ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। আর ছোট মেয়ে রাদিতা নবম শ্রেণিতে এবং ছেলে রামিম তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তিনি নিজে উপজেলা প্রকৌশল দফতরে চাকরি করেন। ছেলে রিয়াদ প্রতিবন্ধী হওয়ায় তিনি দুঃশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। পরে ছেলের আগ্রহের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করছেন।
রিয়াদের মা তাকে মুখে উচ্চারণ করে পড়া মুখস্থ করান। পরীক্ষা হলে একজন শ্রুতি লেখক নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
মা হোসনে আরা জানান, রিয়াদ ঠিকমতো চোখে দেখতে পায় না। শারীরিকভাবেও স্বাভাবিক নয়। কিন্তু তাকেও স্বাভাবিক সন্তানদের মতোই মানুষ করতেই লেখাপড়ায় এগিয়ে নিচ্ছেন। সমাজের এমন সন্তানের বাবা-মাকেও যত্নশীল হয়ে তাদের পড়ালেখায় এগিয়ে নিতে তিনি আহ্বান জানান।
কেন্দ্র সচিব কাইছার ওয়াদুদ বাবর বলেন, শ্রুতি লেখক নিয়ে পরীক্ষার আবেদন করায় তাকে বোর্ড অনুমোদন দিয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হওয়ায় তাকে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় দেয়া হচ্ছে।