আবরারের বইপত্র-জামাকাপড় পরিবারকে বুঝিয়ে দিল বুয়েট
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:১৯ পিএম
আবরারের ব্যবহৃত মালামাল (ইনসেটে আবরার)।
ছাত্রলীগ নেতা-কর্মিদের হাতে খুন হওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বইপত্র-জামাকাপড় পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়েছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এসব জিনিসপত্র বুঝে নেন আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ ও তার ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ।
২০১৮ সালের ৩১শে মার্চ আবরার ফাহাদ বুয়েট ক্যাম্পাসের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বার রুমে উঠেছিল। এ সময় আবরারের বাবার সঙ্গে ছিলেন ভাই ফাইয়াজ, চাচা মকলেছুর রহমান, মামা মোফাজ্জেল হোসেন ও আব্দুল কাদের, মামাতো ভাই জহরুল ইসলাম এবং ফুপাতো বোন আফরিদা পারভীন লিজা।
আবরারের মামতো ভাই জহরুল ইসলাম জানান, বুয়েট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সকাল ১০টায় তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ শেরেবাংলা হলের আবরারের ১০১১ নম্বর রুমের তালা খুলে তার ব্যবহৃত সব মালামাল আমাদেরকে বুঝিয়ে দেন।
তিনি জানান, আবরারের সমস্ত মালামাল প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে ভ্যানযোগে কুরিয়ার সার্ভিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আবরারের কুষ্টিয়ার বাড়ির ঠিকানায় মালামাল বুকিং করে দেয়া হয়েছে।
আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ বলেন, কয়েকদিন আগেই বুয়েট থেকে আমাকে মোবাইল ফোনে আবরারের জিনিসপত্র নিয়ে যেতে বলেছিলেন। তাদের কথায় আমারা এসে সব জিনিসপত্র বুঝে নিয়েছি। তিনি বলেন, আবরারের শেষ স্মৃতি হিসেবে তার ব্যবহৃত এই জিনিসগুলো আমরা রেখে দেব।
আবরারের মামা আব্দুল কাদের বলেন, বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে বুয়েটে এসেছিল আবরার। আজ শূন্য হাতে ফিরে আসতে হল তার পরিবারকে। একজন বাবাকে তার সন্তানের সব স্মৃতি, বুক ভরা স্বপ্ন এভাবে মাথায় বইতে হচ্ছে। এ পৃথিবীতে বাবার কাঁধে সব থেকে ভারী জিনিস হচ্ছে সন্তানের লাশ। স্বপ্নের পরিবর্তে আবরারের বাবাকে সন্তানের লাশ আর তার জিনিসপত্র বইতে হচ্ছে। যেখানে ছেলের অর্জিত ডিগ্রি সাথে করে মাথা উঁচু করে ফেরার কথা সেখানে সন্তনের লাশের পরে তার ব্যাবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে ফিরতে হল। একজন বাবার কাছে এর থেকে কষ্টের আর কিছু থাকে না।
আবরারের ফুপাতো বোন আফরিদা পারভীন লিজা বলেন, ছোট ভাই ফাইয়াজের জন্য একটি শার্ট কিনেছিল আবরার। শার্টটি তার রুমেই ছিল। ফাইয়াজ শার্টটি দেখেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বার বার শার্টটি ধরে দেখছিল আর তখন ফায়াজের মুখটা বেদনায় ভরে যাচ্ছিল।
লিজা বলেন, একজন বড় ভাই শুধু ভাই না, সে বাবা মা বন্ধু সব কিছু। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই ছোট ভাইকে তার বড় ভাইয়ের ব্যবহৃত জিনিসপত্র বইতে হচ্ছে।
গত ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে নিহত হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ৫ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। পরদিন ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক মারপিট করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।