বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সাবেক এমডি হাবিবউদ্দীনসহ ৩ কর্মকর্তা কারাগারে
দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:৪৬ এএম
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সাবেক এমডি হাবিবউদ্দীনসহ ৩ কর্মকর্তা কারাগারে নেয়া হচ্ছে
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ টন কয়লা লোপাটের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় খনির সাবেক এমডি প্রকৌশলী হাবিবউদ্দীন আহমেদসহ ৩ কর্মকর্তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
ওই মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশের একদিন পর বুধবার দুপুরে মামলার চার্জশিটভুক্ত ২৩ আসামি দিনাজপুরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আজিজ আহমদ ভূঁঞার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আদালত ৩ জনের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এ সময় সাবেক ৬ জন এমডিসহ বাকি ২০ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
যাদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে, তারা হলেন- কয়লা লোপাটের ঘটনা ধরা পড়ার সময়কালীন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী হাবিবউদ্দীন আহমেদ, খনির মাইন অপারেশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু তাহের মো. নুর-উজ-জামান ও স্টোর ডিপার্টমেন্টের উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম খালেদুল ইসলাম।
দুদকের আইনজীবী ওমর ফারুক আদালতের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, কয়লা লোপাটের ঘটনায় সুস্পষ্ট অভিযোগ আসায় ৩ জনের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। চার্জশিটে ২০ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পর্যায়ক্রমে না আসায় আদালত তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার একই আদালত দুদকের দাখিল করা চার্জশিট আমলে নেন। একই সঙ্গে চার্জশিটভুক্ত ২৩ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ মেট্রিক টন কয়লা চুরি হয় বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে। যার আনুমানিক মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা ৮৪ পয়সা।
এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় এবং কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা গায়েবের ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান বাদী হয়ে গত বছর ২৪ জুলাই ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি দুদকের তফশিলভুক্ত হওয়ায় দুদক কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। পরে মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক সামসুল আলম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত করেন। গত ২৪ জুলাই মামলাটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়।
এই চার্জশিটে এজাহার নামীয় ছাড়াও ৯ জনকে যুক্ত করা হয় এবং তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ৫ জনকে আসামি থেকে বাদ দেয়ার কথা বলা হয়।
চার্জশিটে যাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তারা হলেন- খনির ব্যবস্থাপক মো. মোশাররফ হোসেন সরকার, ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক একরামুল হক, সাবেক ব্যবস্থাপক মো. আবদুল মান্নান পাটোয়ারী ও মহাব্যবস্থাপক গোপাল চন্দ্র সাহা।
চার্জশিটে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক এমডি মো. মাহবুবুর রহমান, মো. আবদুল আজিজ খান, প্রকৌশলী খুরশীদুল হাসান, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, মো. আমিনুজ্জামান, প্রকৌশলী এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও সাবেক এমডি প্রকৌশলী হাবিব উদ্দীন আহমেদ, সাবেক জিএম (প্রশাসন) মো. শরিফুল আলম, মো. আবুল কাসেম প্রধানীয়া, আবু তাহের মো. নুর-উজ-জামান চৌধুরী (মাইন অপারেশন বিভাগ), নিরাপত্তা বিভাগের ম্যানেজার মাসুদুর রহমান হাওলাদার, মো. আরিফুর রহমান (ম্যানেজার, মেইন্টেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন), নিরাপত্তা বিভাগের ম্যানেজার সৈয়দ ইমাম হাসান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মুহাম্মদ খলিলুর রহমান, মেইন্টেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের ডিজিএম মো. মোর্শেদুজ্জামান, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মো. হাবিবুর রহমান, মাইন ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মো. জাহেদুর রহমান, ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক ডিজিএম সত্যেন্দ্র নাথ বর্মণ ও মো. মনিরুজ্জামান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজার মো. শোয়েবুর রহমান, স্টোর ডিপার্টমেন্টের ডিজিএম একেএম খালেদুল ইসলাম, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজার অশোক কুমার হালদার ও মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ডিজিএম মো. জোবায়ের আলী।