ঢাবিতে সুযোগ পাওয়া সেই জমজ বোনের দায়িত্ব নিলেন বাগেরহাটের ডিসি
শওকত আলী বাবু, বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০১৯, ০৫:৫৩ পিএম
বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ঢাবিতে চান্সপ্রাপ্ত মেধাবী জমজ বোন সাদিয়া আক্তার সুরাইয়া ও নাদিরা ফারজানা সুমাইয়া। ছবি: যুগান্তর
বাগেরহাট শহরের হরিণখানা এলাকার জমজ বোন সাদিয়া আক্তার সুরাইয়া ও নাদিরা ফারজানা সুমাইয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ।
শনিবার দুপুরে বাগেরহাট সার্কিটে হাউসে ওই দুই শিক্ষার্থী ও তার মা সাহিদা বেগমের সঙ্গে কথা বলে তিনি এ আশ্বাস দেন। এসময় বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান, মোহাম্মাদ শাহজাহান, রাহাত উজ্জামান, বাগেহরহাট পৌর সভার ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোল্লা নাসির উপস্থিত ছিলেন।
পৌর কাউন্সিলর মোল্লা নাসির উদ্দিন জানান, আমার ওয়ার্ডের হরিনখানা এলাকার এই দুই মেধাবী শিক্ষার্থী ঢাবিতে সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি প্রথমে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। বিষয়টি অবগত হবার পর শুক্রবার তাদের বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়।
একপর্যায়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মানুনুর রশীদ দেখতে পেয়ে তাদের শনিবার সার্কিট হাউজে ডেকে নিয়ে সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কাউন্সিলর নাসির বলেন, বাগেরহাট পৌরসভার তহবিল থেকে মেয়র খান হাবিবুর রহমানও এ দুই শিক্ষার্থীর পড়াশোনার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়ায় ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা পৌরসভার কাউন্সিলর সবার সর্বসম্মতিক্রমেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
শনিবার সার্কিট হাউজে উপস্থিত হলে বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন মেধাবী ওই দুই শিক্ষার্থীকে দু’টি সিম্পনী আলফা মোবাইল ফোনও উপহার দেন।
বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে আমি বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়কে জানিয়েছি। তিনি মেধাবী এই দুই ছাত্রী নির্বিঘ্নে যাতে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছেন। আমরা তাদের সহযোগিতার জন্য পাশে রয়েছি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, তাদের মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের ভর্তির জন্য কত টাকা প্রয়োজন এবং তাদের আর কী সাহায্য দরকার সেটা জানতে চেয়েছি। এ বিষয় সাহিদা বেগম আমাকে বলেছেন দ্রুতই খোঁজ নিয়ে জানাবে। আমরা তার দুই কন্যার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতার কথা নিশ্চিত করেছি তাকে।
বাগেরহাট সদর উপজেলার হরিনখানা এলাকার রাজমিস্ত্রি দিনমজুর মহিদুল হাওলাদারের জমজ মেয়ে সাদিয়া আকতার সুরাইয়া ও নদিরা ফারজানা সুমাইয়া। অর্থাভাবে টিউশনি করিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছেন তারা। মাধ্যমিকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বাগেরহাট আল ইসলাহ একাডেমিতে ও পরে বাগেরহাট আদর্শ বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগে সুরাইয়া ৪.৮৬, সুমাইয়া ৪.৯১ গ্রেড পেয়ে এসএসসি পাস করেন।
বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজ এইচএসসিতে জমজ এ দুই বোনই জিপিএ গোল্ডেন পান।
ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় গ-ইউনিটে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (গ-ইউনিট) বাণিজ্য অনুষদে সুমাইয়ার মেধাক্রম ৮৪৬ এবং সুরাইয়ার মেধাক্রম ১১৬৩।
মেধাবী জমজ দুই কন্যার গর্বিত মা সাহিদা বেগম যুগান্তরকে বলেন, অর্থকষ্টে থাকার পরও সাধ্যমত তাদেও পড়ালেখা করার জন্য চেষ্টা করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর অনেক চিন্তিত ছিলাম- কী করব তাদের বিষয়ে। তারা ফেসবুকে প্রথমে বিষয়টি সকলের দৃষ্টি আর্কষণের জন্য চেষ্টা করেছে। তাতে সাড়া দিয়ে জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়র , উপজেলা চেয়ারম্যানসহ যারা ইতিমধ্যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবো।