বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে যেতে পথে পথে বাধা
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৩:০৩ পিএম
রোববার বগুড়া-রাজশাহী রুটে বাস চলাচল বন্ধ। ছবি: যুগান্তর
রাজশাহী নগরীর ফায়ার ব্রিগেড মোড়ে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ সামনে রেখে বগুড়া-রাজশাহী রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মাইক্রোবাস, অটো রিকশা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পথে পথে ট্রাফিক পুলিশ বাধা ও গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার বিএনপি নেতাকর্মীরা অনেক কষ্টে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ভ্যানে গ্রামের রাস্তা দিয়ে রাজশাহী পৌঁছেছেন। আগাম ঘোষণা ছাড়া ওই রুটে গাড়ি বন্ধ করে দেয়ায় সপ্তাহের প্রথম দিন অফিসগামী জনগণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট একেএম সাইফুল ইসলাম এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, সরকার বিএনপির জনপ্রিয়তা ভয় পেয়ে সমাবেশে উপস্থিতি কমাতে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। পথে পথে নেতাকর্মীদের গাড়ি আটকিয়ে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকে বিকল্প পথে কষ্ট করে রাজশাহী পৌঁছেছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি শাহ্ আখতারুজ্জামান ডিউক জানান, তারা গাড়ি বন্ধ করে দেননি। বৃষ্টিসহ নানা কারণে যাত্রী কম হওয়ায় শ্রমিকরা গাড়ি বের করেননি। কেউ গাড়ি বের করলেও নাটোর থেকে ফিরে এসেছে।
বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল লতিফ মণ্ডল জানান, শ্রমিকরা গাড়ি বন্ধ করেনি। গাড়ি কেন বন্ধ সে সম্পর্কে তিনি কিছু মন্তব্য করতে পারেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার বিকালে রাজশাহী নগরীর ফায়ার ব্রিগেড মোড়ে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ রয়েছে। কোনো ঘোষণা ছাড়াই রোববার সকাল থেকে বগুড়া-নাটোর বা বগুড়া-রাজশাহী রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
সপ্তাহের প্রথম দিন সকালে চাকরিজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজশাহীগামী বাসের জন্য শহরের সাতমাথা ও শহরতলির চারমাথায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গেলেও কোনো গাড়ি পাননি।
দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করে অনেকে বৃষ্টির মধ্যে অটোরিকশা, ভ্যান নিয়ে গন্তব্যের দিকে রওনা হন। শহরতলির শাকপালা স্ট্যান্ডেও বাসের জন্য অনেক মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও নাটোরের সিংড়া সেতু ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া ট্রাফিক পুলিশ মাইক্রোবাস ও সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে তল্লাশির পর বিএনপি নেতাকর্মীদের নামিয়ে দিয়েছে।
বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, রাজশাহীর মহাসমাবেশে যোগ দিতে নেতাকর্মীরা শনিবার রাতেই রাজশাহী পৌঁছেছেন। তারা বিভিন্ন বাসাবাড়ি, মেস ও ছাত্রাবাসে অবস্থান নিয়েছেন। যারা রোববার সকালে রওনা দেন তারা পথে পথে বাধার মুখের পড়েন।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম, নাটোরের সিংড়ায় গাড়ি থামিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে অনেকে নওগাঁ দিয়ে রাজশাহী যাওয়ার চেষ্টা করলেও নওগাঁর আবদুল জলিল পার্ক এলাকা ও বাইপাস সড়কে থামিয়ে দেয়া হয়।
বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যান জানান, তারা মাইক্রোবাসে রাজশাহী যাচ্ছিলেন। সকালে নাটোর হয়ে যেতে বাধা পেয়ে তারা ফিরে এসে নওগাঁ হয়ে রওনা দেন।
সকাল ৬টার দিকে নওগাঁয় তাদের মাইক্রোবাস আটকে দেয়া হয়। তারা কয়েকজন রাজশাহীগামী ট্রেন ধরার জন্য সান্তাহারে এলেও ট্রেন মিস করেন। সেখান থেকে সিএনজিতে আত্রাই স্টেশন গিয়েও ট্রেন ধরতে পারেননি।
অটোরিকশা নিয়ে রওনা হলে নওগাঁর মান্দা ফেরিঘাটে বাধা দেয়া হয়। সেখানে জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী লাভলী রহমানের নেতৃত্বে রওনা হওয়া জেলা মহিলা দলের গাড়ি আটকানো হলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পরে ছাত্রদলে নেতাকর্মীরা গ্রামের মধ্য দিয়ে অনেক কষ্টে রাজশাহীতে পৌঁছান।
তিনি আরও জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক সংসদ সদস্য ও বগুড়া জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর গাড়িও নাটোরের সিংড়ায় আটকে দেয়া হয়। পরে তিনি ফিরে এসে নওগাঁ হয়ে রওনা হলেও বাধা পান। পরে তারা সাবেক এমপি লালুকে সঙ্গে নেন।
ছাত্রদল নেতা বলেন, সরকার তাদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদী আচরণ করছেন। রাজশাহী বিভাগীয় মহাসমাবেশে নেতাকর্মীর উপস্থিতির ভয়ে তারা বাস বন্ধ করে দিয়েছে। মাইক্রোবাস, সিএনজিতে রওনা হওয়া নেতাকর্মীদের পথে পথে বাধা দেয়া হয়েছে।