পূবাইলে ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বড় ভাইয়ের ‘রহস্যজনক মৃত্যু’, ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন
মো. আখতার হোসেন, পূবাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০১:৫৭ এএম
গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল মেট্রোপলিটন থানাধীন হায়দরাবাদ এলাকায় ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বড় ভাইয়ের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
নিহতের নাম অলি (২৭)। তার বাবার নাম আ. ওহাব। বাড়ি পূবাইলের হায়দরাবাদের করিম মার্কেট এলাকায়। স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নেয়া নিয়ে বুধবার রাত ৯টার দিকে অলির সঙ্গে ঝগড়া হয় ছোট ভাই কামরুজ্জামানের। দুই ভাইয়ের মধ্যে মারামারিও হয়। পরে অলিকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
প্রতিবেশী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, অলির স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। ছোট ভাই কামরুজ্জামান তার মৃত্যুর জন্য দায়ী। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্যই কামরুজ্জামানের পরিবার থেকে কেউ বলছেন, অলি ইঁদুরের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আবার কেউ বলছেন- স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়েছে। এ কারণেই কাউকে না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত করলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা আরও জানান, ঘটনার দিন বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার ভোরে এলাকার লোকজন ৯৯৯-এ ফোন করে পূবাইল থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু পূবাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই বৃহস্পতিবার সকালে লাশ দাফন করা হয়।
বৃহ্স্পতিবার বিকালে অলির বাড়িতে গিয়ে তার মাকে বিলাপ করতে দেখা যায়। ছেলেহারা মা বিলাপ করতে করতে বলছেন, ‘কামরুল (কামরুজ্জামান) তুই কি করলি’।
অন্যদিকে বড় ভাইয়ের ‘মৃত্যুতে’ ছোট ভাই কামরুজ্জামানের চেহারায় শোকের লেশমাত্রও দেখা যায়নি। নিহতের মা ও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাতে বাধা দেয়া হয়।
কামরুজ্জামান জানান, অলি কিছু দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। বুধবার রাতে হঠাৎ স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়। তবে অলির সহকর্মীরা জানান, অলি সহজ সরল প্রকৃতির ছিলেন। তিনি পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন। এমনকি বুধবারও কাজ করেছেন।
অলির রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ দাফন করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় কাউন্সিলর (৩৯ নং ওয়ার্ড) শাহীনুল আলম মৃধা জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বুধবার রাতেই তিনি পূবাইল থানায় যোগাযোগ করেছেন। তিনি মুঠোফোনে পুলিশকে অভিযোগের বিষয়টি জানিয়েছেন। পূবাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যাবে বলে তাকে জানিয়েছিল। কিন্তু পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়।
তবে পূবাইল মেট্রোপলিটন থানার ওসি নাজমুল হক ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, লাশ দাফন হওয়ার আগে এ বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। দাফন হওয়ার পর শোনেছি বিষ খেয়ে ওই ব্যক্তি মারা গেছেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন কমিশনার আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।