প্রতিবন্ধী নির্যাতন: হুকুমদাতা কাস্টমস কমিশনার কারাগারে
কিশোরগঞ্জ ব্যুরো
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০১৯, ০৪:২৫ এএম
অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কমিশনার এমআর খান শাহান। ছবি: যুগান্তর
চুরির অপবাদ দিয়ে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে মোশাররফ নামে মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণকে (১৯) হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অপরাধে হুকুমদাতা অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কমিশনার এমআর খান শাহানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
হাইকোর্টের জামিনে থেকে মেয়াদ শেষে মঙ্গলবার তিনি কিশোরগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। এ সময় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, গত ৬ জুন সকালে দড়িজাহাঙ্গীপুর গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কমিশনার মোখলেছুর রহমান খান শাহান ওরফে এমআর খানের নারিকেলগাছ বেয়ে তার বাড়ির ছাদে উঠেন পার্শ্ববর্তী শামুকজানি গ্রামের কেন্তু মিয়ার ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী মোশারফ হোসেন।
এ ঘটনায় বাড়ির চারপাশের গেটে তালা দিয়ে তাকে আটক করেন বাড়ির কেয়ারটেকাররা।
শাহানের পরিবার মোশাররফকে দেখতে পেয়ে তাকে ধরে নিচে নিয়ে আসে। পরে শাহানের নির্দেশে বাড়ির পাশের গুলবাগ জামে মসজিদের সামনে খোলা মাঠে মোশাররফের হাত-পা বেঁধে জনসম্মুখে অমানবিক নির্যাতন চালায়।
আর বাড়ির সামনে চারদেয়ালের ভেতর চেয়ারে বসে এ নিষ্ঠুর নির্যাতনের ঘটনা দেখেন এমআর খান শাহান।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে নির্যাতনের সেই ভিডিও।
পরে পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করে মোশাররফকে তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার দিন রাতে মোশাররফের বড় ভাই বাদী হয়ে ওই অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমসের সহকারী কমিশনার এমআর খান শাহান এবং নির্যাতনকারী তার বাড়ির দুই কেয়ারটেকারকে আসামি করে মামলা রুজু করেন।
এর পর পুলিশপ্রধান কেয়ারটেকার হিটলারকে গ্রেফতার করে। তবে অধরা থেকে যায় প্রধান আসামি হুকুমদাতা ধনাঢ্য ব্যক্তিত্ব এমআর খান ও অন্য এক কেয়ারটেকার।
এ ঘটনায় দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনে বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার করে। আর এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে তাড়াইল উপজেলা।
পরে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।