ঝালকাঠির সেই নরসুন্দর শেফালীকে জমি ও ঘর দিলেন প্রধানমন্ত্রী
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০১৯, ১২:১৪ পিএম
পুরুষের চুল দাড়ি কাটছেন ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার দোগনা গ্রামের শেফালী রানী
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার নরসুন্দর শেফালী রানীকে জমি ও ঘর দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান কাঁঠালিয়ার দোগনা গ্রামে গিয়ে শেফালী রানীর হাতে জমির দলিল তুলে দেন।
শেফালী রানীকে চার শতাংশ খাস জমিতে একটি একতলা ভবন করে দেয়া হবে।
জমি ও ভবন নির্মাণের সুসংবাদ শুনে শেফালী রানী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
দলিল হস্তান্তরকালে প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শেফালী রানীর দুরবস্থার কথা গণমাধ্যমে তুলে ধরায় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের খবর রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তার নির্দেশে শেফালী রানীকে চার শতাংশ জমি ও তিনলাখ টাকা ব্যয়ে একটি ভবন নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
পরে দোগনা বাজারে সুধিজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুল রহমান।
জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় দুঃখী মানুষের খোঁজ খবর রাখেন বলেই তিনি আজ মাদার অব হিউম্যানিটি।
তিনি আরও বলেন, এ সরকারের প্রধান নীতি হলো দেশের কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না, সরকার সব নাগরিকের তিন বেলা খাওয়া এবং বসতঘরের নিশ্চয়তা প্রদান করবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালায়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোহসীন, ঝালকাঠির পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিন ও কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমাদুল হক মনির ও শৌলজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহামুদুর রহমান রিপন।
উপস্থিত ছিলেন নলছিটি উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান ও গালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুল হক কামাল।
দুপুর ১টায় প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ঝালকাঠি প্রেসক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রেসক্লাব সভাপতি কাজী খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মানিক রায় ও সহসভাপতি আককাস সিকদার। এ সময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং প্রতিমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।
১৫ বছর আগে স্বামী নিরুদ্দেশ হওয়ার পর অসহায় হয়ে পড়েন শেফালী রানী শীল (৫০)। পাঁচ ছেলে মেয়ের লেখাপড়া ও সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে তার। বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ শুরু করেন।
সেখান থেকে যে টাকা পাওয়া যেতো, তা দিয়ে কোনো রকমের খাবার জুটতো। কখনো একবেলা খেয়ে পুরো দিন কাটতো ছয় সদস্যের এ পরিবারের।
বাধ্য হয়ে স্বামীর পেশাকে বেছে নেন শেফালী রানী। সেই থেকে ১৫ বছর ধরে পুরুষের চুল দাড়ি কাটছেন ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার দোগনা গ্রামের শেফালী রানী। দোগনা বাজারে এক প্রবাসীর ঘরের বারান্দায় তিনি সেলুন দেন।