ট্রেনে ছোঁড়া পাথরে জিসানের ব্রেনে রক্ত জমাট, কারাগারে নিক্ষেপকারী
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ মে ২০১৯, ১০:১২ এএম
ফাইল ছবি
দুর্বৃত্তের ছোঁড়া পাথরের আঘাতে শিশু ট্রেনযাত্রী সালমান জাহান জিসানের মাথায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সিটি স্ক্যান রিপোর্ট অনুযায়ী, তার ব্রেনে রক্ত জমেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
শিশু জিসানকে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় সোমবার রাতে আবু হানিফ (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে তাকে সিরাজগঞ্জ জেলহাজতে পাঠানো হয়।
গ্রেফতার হানিফ সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কড্ডা কৃষ্ণপুর এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে। হানিফ জিজ্ঞাসাবাদে ওইদিন ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।
এদিকে আহত জিসান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। ওই ওয়ার্ডেরে ৩০ নম্বর বেডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে জিসানকে। সোমবার রাতেই তার সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন তার অবস্থা উন্নতির দিকে।
নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফম মোমতাজুল হক এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মারাত্মক আঘাতের কারণে জিসানের মাথার বাম পেরিয়েটাল হাড় কিছুটা দেবে গেছে। এই কারণে ব্রেনে রক্ত জমেছে। সফল অস্ত্রোপচার শেষে তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আপাতত সে শঙ্কামুক্ত বলেও জানান চিকিৎসক।
এর আগে ৫ মে রাত ৮টার দিকে জামতৈল-ক্যাপ্টেন মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেসের ঞ বগির জানালায় পাথর নিক্ষেপ করে এক দুর্বৃত্ত। এতে জানালার পাশের আসনে বসে থাকা জিসান মারাত্মকভাবে মাথায় আঘাত পায়।
তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল এবং পরে সেখান থেকে ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। আহত জিসান নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার সোনাইকান্দা এলাকার আবদুস সালামের ছেলে। বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় যাচ্ছিল ওই শিশু।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে (৩০ নম্বর ওয়ার্ড) গিয়ে দেখা গেছে, ছেলের পাশে বসে রয়েছেন বাবা আবদুস সালাম। বিছানার আরেকপাশে মা জেমি।
বাবা আবদুস সালাম জানান, অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সেরে ওঠছে জিসান। মঙ্গলবার তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু ব্রেনে রক্ত জমে থাকায় আরও ৪-৫ দিন দেখতে চাইছেন চিকিৎসকরা।
তিনি বলেন, ব্যবসাসূত্রে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করি। যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে প্রায়ই বেছে নেই ট্রেন। বিভিন্ন সময় ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা শুনেছি। কিন্তু এবার এর ভয়াবহতা টের পেলাম। এমন ঘটনা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান আবদুস সালাম।
সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে থানার ওসি হারুন মজুমদার জানান, পদ্মা এক্সপ্রেসে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৫ মে রাতে থানায় মামলা দায়ের করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (পিডব্লিইআই) গোলাম মোস্তফা।
ওই মামলায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আবু হানিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আবু হানিফ পুলিশকে জানিয়েছেন, কারণ ছাড়াই তিনি একাই ট্রেনের জানালায় পাথর ছুঁড়েন। এর আগেও বিভিন্ন সময় একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মঙ্গলবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি।
এদিকে, গত ৫ মে রাতে ইশ্বরদীতে রাজশাহীগামী মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের শিকার হয়েছে যুথি আক্তার (১২) নামে আরেক শিশু। যুথি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাহিরবাটি সদরঘাট এলাকার হামিদুল ইসলামের মেয়ে।
হামিদুল ইসলাম জানান, চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে আসছিলেন তিনি। মেয়েকে নিয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা স্টেশনে মধুমতি এক্সপ্রেসে ওঠেন। ট্রেনটি পাকশি-ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় পৌঁছালে ঙ বগির জানালায় পাথর নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পায় জানালার কাছে বসে থাকা যুথি আক্তার।
ওই দিন রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। আঘাত ততটা গুরুতর না হওয়ায় চিকিৎসা শেষে ৬ মে দুপুর ২টার দিকে হাসপাতাল ছেড়ে যায় যুথি।
ট্রেনে অন্তত ১৭টি পাথর নিক্ষেপের তথ্য নিশ্চিত করেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) খন্দকার শহিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, একদল দুষ্কৃতকারী পাথর নিক্ষেপ করে জানমালের ক্ষতি সাধন করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে যাত্রীদেরও সর্তক থাকার পরামর্শ দেন জিএম।