নিজ যোগ্যতায় জয়ী হতে চান পা দিয়ে পরীক্ষা দেয়া বিউটি
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৩১ পিএম
বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী বিউটি ডান পায়ের দুই আঙ্গুল দিয়ে কলম ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মত শাবলিল গতিতে লিখছেন
প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনো বাধা নয়। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার মেধাবী বিউটি আকতার।
তিনি এ বছর জাহানারা কামরুজ্জামান ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে পা দিয়ে লিখে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। প্রতিবন্ধী হিসেবে বাড়তি সময় দেয়া হলেও তিনি না গ্রহণ করেননি।
বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী বিউটি ডান পায়ের দুই আঙ্গুল দিয়ে কলম ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মত শাবলিল গতিতে লিখছেন।
জানা গেছে, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার শিবপুর গ্রামের বর্গাচাষী বায়েজিদ হোসেন ও রহিমা বেগমের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বিউটি ছোট। জন্ম থেকে তার দুটি হাত নেই।
বিউটিকে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের হতাশা ছিল। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছা থাকায় বাবা-মা তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। প্রাথমিক সমাপনী, জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষাতে ভালো ফলাফল করেছে।
স্থানীয় একটি স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষাতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। উচ্চশিক্ষার আশায় দুপচাঁচিয়া মহিলা ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। এ বছর তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। পার্শ্ববর্তী দুপচাঁচিয়া জাহানারা কামরুজ্জামান কলেজ কেন্দ্রে তার পরীক্ষা চলছে।
শনিবার ওই কলেজে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, বিউটি আকতার ৯ নম্বর কক্ষে অন্য শিক্ষার্থীদের পাশেই বেঞ্চের ওপর বসে ডান পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম রেখে খাতায় ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিচ্ছেন। ছবি তোলার ব্যাপারে তার খুব অনিহা। তাই ক্যামেরার দিকে না তাকিয়ে খাতায় লিখছিলেন।
কেন্দ্র সচিব ও জাহানারা কামরুজ্জামান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ জানান, জন্ম থেকে বিউটি আকতারের দুটি হাত নেই। প্রতিবন্ধী হিসেবে তাকে বাড়তি সময় দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহণ করেননি। সাধারণ শিক্ষার্থীর মতো পরীক্ষা দিচ্ছেন। বাংলা প্রথমপত্র ও দ্বিতীয় পত্রের মতো ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষাতে সাবলীল গতিতে উত্তরপত্রে লিখেছে। লেখাও সুন্দর।
মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল হক আকন্দ জানান, বিউটি আকতার খুব মেধাবী ছাত্রী। নিয়মিত ক্লাস করেছে। ক্লাস পরীক্ষার ফলাফল ছিল সন্তোষজনক। তার বিশ্বাস বিউটি এসএসসি ও অন্যান্য পরীক্ষার মত এইচএসসিতেও ভাল ফলাফল করবে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেন জানান, প্রতিবন্ধী বিউটি আকতার নারীদের এগিয়ে যাওয়ার একটি উদাহরণ। সে প্রতিবন্ধী হয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। অদম্য ইচ্ছার কারণেই সে লেখাপড়ায় এগিয়ে যাচ্ছে।
মেধাবী বিউটি আকতার জানান, জন্ম থেকে তার দুই হাত নেই। তবে ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি তার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। মা রহিমা বেগম তাকে পা দিয়ে লিখতে শিখিয়েছেন। তার জন্য মা অনেক কষ্ট করেছেন।
তিনি আরো জানান, পরীক্ষা ভালো হচ্ছে; তাই ভালো ফলাফল আশা করছেন।
ভবিষ্যতে কী হতে চান এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চান। এজন্য তিনি সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।