খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চার পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট ও অবরোধ কর্মসূচির শেষ দিনে বৃহস্পতিবার নগরীর দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড় এলাকায় শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন ট্রাফিক পরিদর্শক আবুল বাশার, কনস্টেবল মনির, রায়হান ও রাতুল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বকেয়া বেতন পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের দাবিতে গত দুদিনের মতো বৃহস্পতিবারও সকালে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ করেন খুলনার পাটকল শ্রমিকরা। ভোর থেকে তারা দৌলতপুরের নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নেয়।

সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থিত পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ধাওয়া দিলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ।

এ সময় বেশ কয়েকটি যানবাহনও ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। খবর পেয়ে পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) সরদার রকিবুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (আরসিডি) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, আহত পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কোনো উত্তেজনা এখন নেই।

বকেয়া মজুরি পরিশোধ এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ নয় দফা দাবিতে বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের ডাকে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা এ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে। সকাল থেকে শ্রমিকরা নগরীর খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক, বিআইডিসি সড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে রাখে।

এছাড়া তারা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ করে। শ্রমিকদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধের কারণে নতুন রাস্তা মোড় দিয়ে যানবাহন ও খুলনার সঙ্গে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, সরকার জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ সুপারিশ বাস্তবায়ন, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীদের পিএফ গ্র্যাচুইটি ও মৃত শ্রমিকের বিমার বকেয়া টাকা প্রদান, টার্মিনেশন ও বরখাস্ত শ্রমিকদের কাজে পুনর্বহাল, শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়োগ ও স্থায়ীকরণ, পাট মৌসুমে পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দ, উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে বিএমআরই করাসহ নয় দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো এখনও বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি।

তিনি বলেন, ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট আজ শেষ হবে। এরপর ৭ এপ্রিল (রোববার) ঢাকায় বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকলের শ্রমিক নেতারা বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।