সপ্তগঙ্গার তীরে ওরস-পুণ্যস্নান সম্প্রীতির মেলবন্ধন
হাবিব সরোয়ার আজাদ, যুগান্তর রিপোর্ট, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০১৯, ০১:০৬ পিএম
সপ্তগঙ্গার তীরে ওরস-পুণ্যস্নান উপলক্ষে শুরু হচ্ছে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির মেলবন্ধন
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে এবারও সপ্তগঙ্গার তীরে ওরস-পুণ্যস্নান উপলক্ষে শুরু হচ্ছে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির মেলবন্ধন।
মঙ্গলবার সকাল থেকে উপজেলার লাউড়েরগড় সীমান্তে হজরত শাহ আরেফিন (রহ.) আস্তানায় বার্ষিক ওরস এবং রাজারগাঁও শ্রী শ্রী অদ্বৈত প্রভুর জন্মধাম লাউড় নবগ্রাম পুণ্যতীর্থ ধামে জাদুকাঁটা নদীতে গঙ্গাস্নানযাত্রা মহোৎসব উপলক্ষে হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের লাখো মানুষের মিলনমেলা শুরু হচ্ছে।
প্রায় ৭০০ বছরের অধিক সময় থেকে চলে আসা জাদুকাঁটা নদীতে গঙ্গাস্নানের মধ্য দিয়ে পুণ্যলাভ ও শাহ আরেফিন (রহ.) বার্ষিক ওরস উপলক্ষে বারুণী মেলায় সারা দেশ থেকে হিন্দু এবং মুসলিম ধর্মাবলম্বী লাখো মানুষ এসে জড়ো হয়।
উপজেলার উত্তর বাদাঘাট ইউনিয়নের প্রাচীন লাউর রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী নবগ্রাম রাজারগাঁওয়ে শ্রী শ্রী অদ্বৈত প্রভুর জন্মস্থান সপ্তগঙ্গার মিলনকেন্দ্র জাদুকাঁটা নদীর তীরে পুণ্যতীর্থে এ বছর স্নানযাত্রার মুখ্য সময় নির্ধারিত হয়েছে মঙ্গলবার সকাল ৯টা ০৭ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড থেকে রাত ১টা ২০ মিনিট ০৭ সেকেন্ড পর্যন্ত।
সোমবার পুণ্যতীর্থ ইসকন মন্দির গড়কাটি অধ্যক্ষ ভক্তপ্রিয় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী যুগান্তরকে জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় গঙ্গাপূজার মাধ্যমে স্নানযাত্রা মহোৎসবের শুরু হবে। ওইদিন সকাল থেকে সারা রাত ও পরদিন বুধবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ ভক্তের মধ্যে ইসকন মন্দিরে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে।
গঙ্গাস্নান যাত্রাকে কেন্দ্র করে ইসকনের উদ্যোগে মঙ্গল আরতী, ভজন, লীলা কীর্তন, বৈদিক নাঠক, গঙ্গাপূজা, দেশের বেতার, টিভি ও মঞ্চশিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
এদিকে ২৮-বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশের (বিজিবি) তাহিরপুরের লাউড়েরগড় সীমান্তে বাংলাদেশ-ভারত জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন হজরত শাহ আরেফিনের (রহ.) আস্থানায় মঙ্গলবার বাদ ফজর মিলাদ মাহফিলের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ৩ দিনব্যাপী বার্ষিক ওরস মোবারক।
হযরত শাহ আরেফিনের (রহ.) পবিত্র ওরস উপলক্ষে দোয়া, মিলাদ মাহফিল. জিকির, মরমী ও বাউল সাধকদের কাফেলাধারী গানের আয়োজন ছাড়াও নানা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) আস্থানার খাদেম বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আমিন চিশতী জানান, শুক্রবার বাদ ফজর আখেরি মোনাজাত ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে ওরস উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।
তিনি আরও জানান, হজরত শাহ আরেফিন (রহ.) লঙ্গরখানায় ওরসের শুরু থেকে শেষ দিন সকাল পর্যন্ত ভক্ত ও দর্শনার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হবে।
ওরস ও স্নানযাত্রা উৎসবের আয়োজন কমিটির লোকজন জানান, সপ্তাহব্যাপী দুই ধর্মের দুই আধ্যাত্মিক সাধকের উৎসবকে ঘিরে দেশ-বিদেশ থেকে আসা এ বছর কমপক্ষে ৪-৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান জানান, মেলা ও ওরস উপলক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের মাধ্যমে চারটি অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি বসানো হয়েছে। এছাড়াও বিজিবি, আনসার, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা, আর্মড পুলিশ ও র্যাবের টহল দল থাকবে।
২৮-বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ বিজিবির সুনামগঞ্জের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাকসুদুল আলম জানান, সীমান্ত এলাকায় ওরস ও বারুণীমেলাকে ঘিরে অতিরিক্ত বিজিবির সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ওরস ও মেলাকে কেন্দ্র করে মাদক বেচাকেনা, দোকানপাঠে অহেতুক চাঁদাবাজি, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন অপরাধসহ যে কোনো ধরনের অপতৎরতা প্রতিরোধে বিজিবি সদস্যদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ জানান, ওরস ও গঙ্গাস্নান উৎসব উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসন সার্বিকভাবে জননিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করবে।