মেঘালয়ের কূলঘেঁষা শিমুল বাগান
হাবিব সরোয়ার আজাদ, তাহিরপুর থেকে
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১১:৩৩ পিএম
জাদুকাটা-মাহারামের তীরঘেঁষা শিমুল বাগান। ছবি: যুগান্তর
মাঘ মাসের আর দিন কয়েক পরেই আগমন ঘটবে ঋতুরাজ বসন্তের। আর বসন্তের আগমনী লাল রঙে সেজেছে দেশের একমাত্র সর্ববৃহৎ জয়নাল আবেদীনের শিমুল বাগান।
ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, এপারে রূপের নদী জাদুকাটা-মাহারামের তীরঘেঁষা শিমুল বাগান।
প্রতি বছরের ন্যায় বসন্ত উৎসবে ফাল্গুনের প্রথম দিন থেকেই দেশ-বিদেশের লাখো পর্যটক, ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমীর আগমণ ঘটে এ বাগানে।
জানা গেছে, ২০০২ সালে তাহিরপুরের বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ জয়নাল আবেদীন মানিগাঁওয়ে প্রায় শতবিঘা জমিতে এক হাজার শিমুলগাছ রোপণের মধ্য দিয়ে ওই বাগান গড়ে তোলেন।
শিমুলগাছের ফাঁকে ফাঁকে বাগানের ভেতরই রোপণ করা হয় কয়েক হাজার দেশীয় লেবুর চারা। তিনি পরে মৃত্যুবরণ করলেও ওই দৃষ্টিনন্দন বাগানের কারণেই আজও দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটক, ভ্রমণপিপাসু ও প্রকৃতিপ্রেমী এ বাগানে বেড়াতে এসে বৃক্ষপ্রেমী প্রয়াত জয়নাল আবেদীনের কথা স্মরণ করেন শ্রদ্ধার সঙ্গে।
জানা যায়, প্রয়াত জয়নাল আবেদীনের ওই বাগান তৈরিতে কয়েকটি লক্ষ্য ছিল। এর একটি হলো- নদীতীরবর্তী ওই পতিত মরুময় ভূমিকে খরস্রোত সীমান্ত নদী জাদুকাটা মাহারামের আগ্রাসী ভাঙন থেকে রক্ষা করা। বাগানের গাছের পাতা–ডালপালা থেকে লাকড়ি, দেশীয় তুলা, গবাধিপশুর জন্য সবুজ ঘাস সংগ্রহ করা।
এ ছাড়া প্রধান উদ্দেশ্য ছিল- পর্যটক আকৃষ্ট করা এবং এলাকার লোকজনকে বাগান সৃজনে উৎসাহী করা।
জয়নাল আবেদীনের ছেলে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন জানান, আমার বাবা মারা গেছেন। কিন্তু উনার প্রতিটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। শুধু বসন্তকালেই নয়, বছরের প্রতিটি দিন এ বাগানে দেশ-বিদেশ থেকে হাজারও লোকজন বেড়াতে আসেন। তারা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে তৃপ্তি নিয়ে ফিরে যান।
উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম জানান, আমার ইউনিয়নে গড়ে তোলা আলহাজ জয়নাল আবেদীনের এ শিমুল বাগান শুধু তাহিরপুরবাসীর নয়, জেলাবাসীর ঐতিহ্যের ধারকবাহকে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ বাগানে চলচ্চিত্র, গান, বিজ্ঞাপন চিত্রের শুটিং হচ্ছে। দেশ-বিদেশের পর্যটক ও স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও তাদের স্টাডি ট্যুর করতে এ বাগানে ছুটে আসেন।
জয়নাল আবেদীনের লন্ডন প্রবাসী মেয়ে দোলেনা রহমান জানিয়েছেন, বাগানটি পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে নিরাপত্তাবেষ্টনীর ভেতর আপাতত ওয়াশরুম ও কয়েকটি পাকা বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাগানে পর্যটকদের নানাবিধ সুবিধার কথা মাথায় রেখে আরও বেশ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
দেশের যে কোনো স্থান থেকে সরাসরি বাস, মাইক্রো বা চার চাকার যানবাহন নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের আবদুজ জহুর সেতু হয়ে লাউড়েরগড়-বিন্নাকুলি-মিয়ারচর যানবাহন রেখে খেয়া পাড়ি দিয়ে পরবর্তী সময় লেগুনা, ইজিবাইক, ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে করে এ বাগানে অনায়াসেই যাতায়াত করা যায়।
এ ছাড়া দেশের যে কোনো স্থান থেকে চার চাকার বাহন সুনামগঞ্জ হয়ে তাহিরপুর উপজেলা সদরে বাহনটি রেখে ফের ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল নিয়ে বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট হয়েও সরাসরি এ বাগানে যাতায়াত সুবিধা রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, বাগানে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য পর্যাপ্ত পুলিশী নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকদের যে কোনো ধরনের সহযোগিতার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকেও নির্দেশনা দেয়া আছে।