রাজবাড়ীর বিভিন্ন সরিষা ক্ষেতের পাশে বসানো বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মৌচাষিরা
শীত মৌসুমের শুরু থেকেই রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন মাঠ ও কৃষি জমি এখন সরিষা ফুলের হলুদ রঙে সেজেছে। দিগন্ত জোড়া হলুদ মাঠে চলছে মৌমাছি ও প্রজাপতির খেলা।
জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মৌচাষিসহ আশপাশের জেলা থেকে আসা মৌয়ালরা এসব সরিষা খেতের পাশে সারি সারি বাক্স সাজিয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
রাজবাড়ী জেলা সদরসহ পাংশা, বালিয়াকান্দি, কালুখালী ও গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন সরিষা ক্ষেতের পাশে বসানো বাক্স থেকে পোষা মৌমাছি উড়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে ফের বাক্সে রাখা মৌচাকে ফিরছে। সপ্তাহ শেষে মধু বিক্রির জন্য ড্রাম বা জার ভর্তি করছে। অনেকে মাঠ থেকে কিনে নিচ্ছে।
কুষ্টিয়ার খোকশা থেকে আসা জমির সেখ (৪০) বলেন, সাতক্ষীরার থেকে প্রায় এক লাখ টাকা দিয়ে তিনি প্রথমে বাক্স ও মৌমাছি কিনেছিলেন। এরপর থেকে নিজে নিজে প্রতি বছর প্রয়োজন অনুসারে বাক্স বানিয়ে থাকেন। বর্তমানে তার নিজের ২৫০টি বাক্স রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ করতে হয়েছে। তার কয়েকটি দল বর্তমানে জেলা সদর ও গোয়ালন্দের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। একেকটি অঞ্চলে থাকা শ্রমিকরা এক সপ্তাহ পর পর মধু সংগ্রহ করছেন।
২৫০বাক্স নিয়ে বসেছেন গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রামের তেনাপাচা এলাকায়। এক সপ্তাহ পর ৭-৮মণ মধু পাচ্ছেন। মধু সংগ্রহের জন্য প্রথমে একটি সুন্দর বাক্স তৈরি করতে হয়। একেকটি বাক্সে মাছি রাখার ৮-৯দিন পরই মধু সংগ্রহের জন্য এক ধরনের চড়কির মাধ্যমে তৈরি মধু ভাঙ্গার ফ্রেম বসিয়ে ঘুরালে মধু বের হয়। পরে এসব মধু জার ভর্তি করে রাখা হয় বিক্রির জন্য। বছরের ছয় মাস মধু সংগ্রহ ও ছয় মাস মৌমাছি পালতে হয়।
তেনাপচা এলাকায় থাকা মৌচাষি জমির শেখ, বিল্লাল হোসেনসহ কয়েকজন জানান, মৌমাছি পালতে গত বছর তাদের একেকটি দলে প্রায় সাড়ে ৩-৪ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছিল। বিলের পাশে উচুঁ স্থানে রেখে মৌমাছিকে চিনি খাওয়াতে হয়। মৌমাছির ছয় মাসের খাবার ও শ্রমিকের খরচের পর বাকি ৬ মাস মধু সংগ্রহ করে প্রায় ৪ লাখ টাকার মতো লাভ থাকে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার মুক্তার হোসেন বসেছেন দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের পশ্চিমে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ইদ্রিস মিয়া পাড়ায়। তিনি জানান, এখানে তার ৯০টি ও পদ্মার ওপার মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের কাছে আরও ৫০টি বাক্স বসিয়েছেন। এক মাসে প্রায় ৪ মণ মধু সংগ্রহ হয়েছে।
গোয়ালন্দ-রাজবাড়ী বেড়ি বাধ সড়কের দক্ষিণে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের আনন্দ বাজার এলাকায় বসন্তপুর থেকে এসেছেন ইব্রাহিম সরদার। তিনি বলেন, প্রায় ১০৮টি বাক্স তিনি এই সরিষা খেতের পাশে বসিয়েছেন। গত মাসে আশানুরুপ মধু সংগ্রহ করতে পারলেও চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে কমতে শুরু করেছে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্পসারন অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এ বছর জেলায় ১ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বর্তমানে এসব বিভিন্ন সরিষার ক্ষেতের পাশে বসে মৌয়ালরা ফুল থেকে মধু আহরণ করছে। স্বল্প সময়ে অল্প খরচে লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছে। আশা করছি এ বছর ভাল পরিমান মধু আহরণ হবে।