
প্রিন্ট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৩ এএম
সাভারে চতুর্থ দিনেও শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, বিজিবি মোতায়েন

আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:৫৭ পিএম

সাভারে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ
আরও পড়ুন
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সাভার ও আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ অব্যাহত রয়েছে। বুধবার চতুর্থ দিনের মতো বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অন্তত অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাভার ও আশুলিয়ার পোশাক কারখানাগুলোর সামনে পুলিশের পাশাপাশি বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে সাভারের হেমায়েতপুর ও আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় শ্রমিক পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই সড়কে রিকশাসহ কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেননি শ্রমিকরা।
এর আগে সকাল ৮টায় শ্রমিকরা আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের পার্শ্ববর্তী পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে নতুন মজুরি কাঠামো পুনর্বাবাস্তবায়ন, বেসিক বৃদ্ধির সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও কারখানায় নিরাপত্তা পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে এ আন্দোলনে নেমে পড়ে শ্রমিকরা।
এ ব্যাপারে শ্রমিকরা জানান, নির্বাচনের পূর্বেই শ্রমিকরা নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন, করে ও শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ করার দাবিতে তারা রাস্তায় নেমেছে। নতুন মজুরি কাঠামো দিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলেও তারা অভিহিত করেন।
সকাল ৯টায় নিশ্চিন্তপুর ও নরসিংহপুর এলাকার হা-মীম গ্রুপ, শারমিন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপ, সোনিয়া গার্মেন্টস, নিট এশিয়া, ট্রাউজার লাইনস, জনরণ লি., ম্যাগপাইসহ প্রায় ২০টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়কে নেমে পড়েন। তারা ৮-১০টি পরিবহন ভাঙচুর করে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ারশেল ও ব্যাপক লাঠিচার্জ করে সড়ক থেকে সড়িয়ে দেয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ওই এলাকায় এ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা চলে।
সকাল সাড়ে ১০টায় বেরন সরকার মার্কেট, ছয়তলা, জামগড়া, শিমুলতলা ও ইউনিক এলাকার প্রায় ৩০টিরও অধিক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থলের উৎপাদন বন্ধ রেখে রাস্তায় নেমে পড়ে। শ্রমিকরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
ওই সময় সড়কে চলাচলরত দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন শাহ ফতেহ আলী ঢাকা, সিমেন্টভর্তি কাভার্ডভ্যান, পাজেরো জীপ, মিনিবাসসহ ২৫-৩০টি গাড়ি ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা একপর্যায়ে ইউনিক ও শিমুলতলা পলমল গ্রুপ এলাকা থেকে বিক্ষোভ নিয়ে জামগড়া চৌরাস্তায় আসলে পুলিশের একটি দল তাদেরকে বাধা দেয়।
বাধা পেয়ে নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা রাস্তায় শুয়ে পড়েন। এ সময় জলকামান ও পুলিশের গাড়ি এসে তাদের সরে যেতে বললে শ্রমিকরা তাদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে বলেন। দাবি আদায় করেই তারা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন বলে পুলিশকে সাফ জানিয়ে দেন তারা।
পরে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। শিমুলতলা এলাকায় শ্রমিকরা রাস্তায় বড় বড় পাথর ও ময়লা স্তূপের বস্তা ফেলে গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
সকাল থেকে ওই এলাকার সেড ফ্যাশন, উইন্ডি গ্রুপ, স্টার্লিং অ্যাপারেলস, স্টার্লিং স্টাইল, স্টার্লিং ক্রিয়েশন, সেতারা গ্রুপ, মেডলার অ্যাপারেলস, বান্দো ডিজাইন, এএম ডিজাইন, এনভয় গ্রুপ, ডিজাইনার জিন্স, দি রোজ ড্রেসেস, ডেকো গ্রুপ, হিয়ন অ্যাপারেলস, দি ড্রেস আইডিয়াস, পলমল গ্রুপসহ প্রায় ৩০টি কারখানার প্রায় ২০ সহস্রাধিক শ্রমিক তাদের দাবিতে অটল থেকে বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে।
সকাল ১০টায় স্টার্লিং অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা কারখানার অভ্যন্তরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় শ্রমিকরা উৎপাদন কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করে।
কর্মকর্তাদের রক্ষায় শাহিন নামে ওই কারখানার আয়রনম্যান এগিয়ে এলে তাকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাকে মারধর করেন। এতে তার মাথায় ও কপালে মারাত্মক জখম হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্লিনিকে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
নারী ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের চিকিৎসাকেন্দ্রে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১৫ শ্রমিক আহতাবস্থায় এসেছে। তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং গুরুতর আহতদের ভর্তি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক জাভেদ মাসুদ বলেন, শ্রমিকরা তাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় পরিবহন চলাচলে বাঁধা, ভাঙচুর ও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। বুধবার শ্রমিকদের এ আন্দোলন দমাতে পুলিশের সঙ্গে ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
অপরদিকে সকালে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে সাভারের উলাইল ও হেমায়েতপুর এলাকায় সাভার এলাকার আল মুসলিমসহ বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ এ বিক্ষোভে বাধা দেয়। এতে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়।
এ সময় শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। এ সময় পুলিশ শ্রমিকদের ওপর দফায় দফায় টিয়ারশেল ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাভার ও আশুলিয়ায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কারখানাগুলোর সামনে পুলিশের জলকামানসহ সাঁজোয়া যান প্রস্তুত রয়েছে। শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে আশুলিয়ায় চারাবাগ এলাকার মেট্রো ফ্যাশন অ্যান্ড ডাইং ও নিউ এশিয়া এবং সাভারের স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের সামস স্টাইল ওয়্যার লি.সহ ৩টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকক্ষ।
শিল্প পুলিশ-১ এর পরিচালক সানা শামীনুর রহমান জানান, পোশাক কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।