সাংবাদিকদের জন্য কমিউনিকেশন সেক্টর দারুণ জায়গা: আদেল
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০৫ পিএম
রাফে সাদনান আদেল দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে সাংবাদিকতা করেছেন দেশের জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে। এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কমিউনিকেশন সেক্টরে। এ মুহূর্তে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে যুক্ত আছেন পাবলিক রিলেশন অফিসের পরিচালক হিসেবে।
ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যান্সার কোয়ালিশনের বোর্ড ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিন বছর ধরে। একজন পুরোদস্তুর সাংবাদিক থেকে হঠাৎ কমিউনিকেশন পেশায় যুক্ত হওয়ার গল্পটা জানতে আমরা কথা বলেছি তার সঙ্গে।
সাংবাদিকতার শুরুটা কোথায়? কেমন ছিল সেই দিনগুলো?
আদেল: ২০০৮ সাল জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর পৃষ্ঠপোষক গ্রুপ ট্রান্সকম বাজারে আনার চেষ্টা করছে দেশের প্রথম সংবাদভিত্তিক এফএম রেডিও-এবিসি রেডিও। সেখানেই যুক্ত হওয়া আউটডোর ব্রডকাস্টার হিসেবে। বাজার আর ট্রাফিক আপডেট দেওয়াই ছিল মূল কাজ। তথ্য সংগ্রহ করে তা সবাইকে পৌঁছে দেওয়ার নেশাটার শুরু সেখানেই। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় প্রথম পেলাম সাংবাদিকতার আসল মজা। প্রথম লাইভ দেওয়া, এতো বড় ইভেন্ট কভার করা; দারুণ সব অভিজ্ঞতা।
তারপর তো আপনি আরও অনেক মিডিয়া হাউজেই কাজ করেছেন?
আদেল: হুম, তারপর বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ট্রাস্টে ইন্টার্ণশীপ করি, অনলাইন বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম হয়ে এটিএন নিউজ দিয়ে শুরু হয় আমার টিভি সাংবাদিকতার জীবন। মূলত সময় টেলিভিশনে কাজ করার পর আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একাত্তর টিভি, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর, ইটিভিতে কখনো রিপোর্টিং কখনো নিউজ, প্রোগ্রাম প্রেজেন্টেশন করেছি। প্রশংসা কুড়িয়েছি আর সাংবাদিকতার নেশায় বুদ হয়েছি প্রতিদিন।
তারপর হঠাৎ একদিন আপনার দেখা মিলল কমিউনিকেশনে তাও আবার ব্র্যাকের মত বড় প্রতিষ্ঠানে, কিভাবে কী!
আদেল: এটা একদম ঠিক, হঠাৎ করে এক বন্ধুর ডাকে চলে গেলাম শেকড় সাংবাদিকতা ছেড়ে কমিউনিকেশনে। কিছুটা অভিমান করেই ছেড়ে দিয়েছিলাম সাংবাদিকতা। কমিউনিকেশনে গিয়ে দেখলাম, একজন সাংবাদিকের জন্য কাজটা একেবারেই ডাল-ভাত পর্যায়ের। সাংবাদিকতার মূল শক্তি হলো, মানুষকে বোঝা আর তার প্রয়োজনীয় তথ্য গণমানুষের কাছে তাদের জন্য সহজবোধ্য করে তুলে ধরা। সেই কাজটাই একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য করতে হয় কমিউনিকেশনে নান্দনিকভাবে আর নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে। বুঝে উঠতেই তরতর করে উন্নতি হতে থাকল আমার। আমিও মজা পাচ্ছিলাম দারুণ। কারণ দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করার কারণে রাষ্ট্রের পলিসি মেকার আর মিডিয়ার ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ পুরোনো। সেই যোগাযোগটা কাজে লাগানোই কমিউনিকেশনে ‘অ্যাডভোকেসি’ আর সে কারণেই আমার কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে গেল। আসলে সাংবাদিকতা যারা করেন তাদের জন্য কমিউনিকেশনে কাজটা করা খুবই সহজ। শুধু ভাষাগুলো ধরতে যতটুকু সময় লাগে এই যা!
ব্র্যাক থেকে আবারও নর্থ সাউথ, কেমন অভিজ্ঞতা?
আদেল: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনকেশনের পরিসরটা অনেক বড় এবং বৈচিত্র্যময়। এক একটি ডিপার্টমেন্ট এবং ক্লাবের ধরণ একেক রকম। প্রতিনিয়ত নতুন কিছু সৃষ্টি হচ্ছে এখানে। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আছে, আছে পুরাতনকে ভেঙে নতুন কিছু করার উদ্যম। আর সে কারণেই কমিউনিকেশনের কাজ থাকে বহুমাত্রিক।
কমিউকেশনে কাজ করবার চ্যালেঞ্জগুলো কি কি?
আদেল: কমিউনিকশনে কাজ করার মূল চ্যালেঞ্জটা হলো ২৪ ঘণ্টা সজাগ থাকা। সাংবাদিকতা করার কারণে তাতেও খুব একটা বেগ পেতে হয় না। ক্রাইসিস অ্যাসেজমেন্ট আর তা ম্যানেজ করতে হয় চট জলদি।
তবে কী সাংবাদিকদের জন্য কমিউনিকেশনে কাজ করা সহজ?
আদেল: অবশ্যই সহজ। শুধু কমিউনিকেশনের ভাষা আর ধরনটা ধরে ফেলতে হয়। সাংবাদিকদের জন্য কন্টেন্ট তৈরি, টার্গেট অডিয়েন্স বুঝে তার ক্যাম্পেইন সাজানো খুবই সহজ। আর মিডিয়া ভিজিবিলিটি এনে দেওয়া তো তাদের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জই না। তার আপনি খেয়াল করবেন, যারা সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে কমিউনিকেশনে যুক্ত হন, তারা খুব কম সময়ে দারুণ অবস্থানে চলে যান।
সাংবাদিকতা পড়ছেন এমন শিক্ষার্থীদের জন্য আপনি কী বলবেন?
আদেল: আমি শুধু বলতে চাই, পড়ালেখা শেষ করে অন্তত দুটো বছর মাঠের সাংবাদিকতা করা উচিত। তারপর সে সিদ্ধান্ত নেবে সে কোন পেশায় যেতে চান। কমিউনিকেশনে আসার আগেই তাকে মূল ধারার নেটওয়ার্কগুলো ঝালিয়ে নেওয়া উচিত। দেশের প্রায় প্রতিটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই কমিউনিকেশনে কাজ করার সুযোগ আছে, দেশি-বিদেশি এনজিওতেও সেই সুযোগ অবারিত। গণমাধ্যমের অস্থিরতা এড়াতে চাইলে কমিউনিকেশনে কাজ করার বিকল্প নেই, অন্তত সংবাদ সংশ্লিষ্টদের জন্য।
অনেকে বলেন, কমিউনিকেশনে ইংরেজি জানা খুব জরুরি, আপনি কী মনে করেন?
আদেল: কথা সত্য। তবে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজির দক্ষতা থাকা জরুরি। নয়ত একটু পিছিয়ে পড়তে হতে পারে। কাজ করতে করতে অবশ্য ইংরেজিটা অনেকখানি আয়ত্তে চলে আসে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।